বাংলাদেশে অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে এবং গণপিটুনির মাধ্যমে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাও অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (৩১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের মে মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসের মতো এবারও এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমএসএফ।
এমএসএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নির্দেশ করে। পাশাপাশি, গণপিটুনির ঘটনাও বন্ধ হয়নি, যার ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এই দুটি ঘটনাই নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির দিকে ইঙ্গিত দেয়।
এমএসএফ-এর পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আটকের ভয়ে পালাতে গিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কম থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া দুষ্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মে মাসে ৫৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৩৫৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৩৫১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৯ জন গুলিবিদ্ধ। নিহতদের মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১ কিশোরসহ ৬ জন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১ কিশোর এবং আওয়ামী-জামাত সংঘর্ষে জামাতের ১ জন রয়েছেন।
এমএসএফ জানিয়েছে, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের পতন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৪২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪১ জন এবং অন্যান্য মামলায় ২৮১ জন। এছাড়াও চলতি মাসে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ ৩২ জন এবং পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্তসহ অন্যান্য মামলায় ২৪ হাজার ৭৩৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এমএসএফ-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসের মতোই মে মাসেও নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা যেমন হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে, তেমনি শিশু ও নারীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতনও বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা গত মাসের (৩৬২টি) চেয়ে ৬টি বেশি। এই মাসে ৫৯টি ধর্ষণের ঘটনা, ১৬টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ৫টি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এমএসএফ আরও জানিয়েছে, সীমান্তে হতাহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি, বরং বাংলা ভাষাভাষীদের ‘পুশ ইন’ করার ঘটনা ঘটিয়ে সীমান্তকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। মে মাসে সীমান্তে গুলি করে হত্যা ও বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এমএসএফ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।