যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো, কারণ রাশিয়া একটি “বিশাল শক্তি” এবং ইউক্রেন তুলনামূলকভাবে ছোট একটি দেশ।
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন এর আগে আলাস্কায় এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হয়। পরদিন শনিবার ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতি দিতে রাজি হয়েছেন যদি ইউক্রেন পুরো ডোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়।
তবে জেলেনস্কি এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন, এমনটাই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে ডোনেৎস্ক প্রদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ। এই অঞ্চল রাশিয়া প্রথম দখল করে ২০১৪ সালে।
এর আগেও ট্রাম্প বলে আসছিলেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি না হলে তিনি শান্তি প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হবেন না। তবে সম্মেলনের পর তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন—যুদ্ধ থামাতে সরাসরি একটি শান্তি চুক্তিই বেশি কার্যকর হবে।
তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ লেখেন, “সব পক্ষ মনে করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সরাসরি একটি শান্তি চুক্তিই সবচেয়ে ভালো পথ। শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি নয়, কারণ তা অনেক সময়ই টেকে না।”
এদিকে, এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, “হত্যা বন্ধ করাটাই যুদ্ধ থামানোর মূল উপাদান। রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মনোভাব স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠাকে জটিল করে তুলছে।”
যদিও দুই নেতার অবস্থান স্পষ্টভাবে ভিন্ন, তারপরও জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
এ বৈঠক স্মরণ করিয়ে দেয় গত ফেব্রুয়ারির সেই আলোচিত সাক্ষাৎকারের কথা, যেখানে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হোয়াইট হাউস ওভাল অফিসে প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে ভর্ৎসনা করেছিলেন।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনপক্ষীয় বৈঠক—তিনি, পুতিন ও জেলেনস্কি—আয়োজন করা হতে পারে।
ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল জানিয়েছেন, তারাও সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। এরপর থেকে যুদ্ধটি ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতে রূপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত দুই পক্ষ মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিক।