নিউ টাউনে নির্বাসিত আওয়ামী নেতাদের দিন কাটে শরীরচর্চা-রূপচর্চা-ভার্চুয়াল বৈঠকে

0
13
নিউ টাউনে নির্বাসিত আওয়ামী নেতাদের দিন কাটে শরীরচর্চা-রূপচর্চা-ভার্চুয়াল বৈঠকে
নিউ টাউনে নির্বাসিত আওয়ামী নেতাদের দিন কাটে শরীরচর্চা-রূপচর্চা-ভার্চুয়াল বৈঠকে

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এক বছর পার হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বেশিরভাগই পালিয়ে ভারতের কলকাতার নিউ টাউনে বসবাস করেছেন। প্রশস্ত সড়ক, সাশ্রয়ী ভাড়া এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে এই এলাকা তাদের জন্য আদর্শ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং স্বৈরাচারী হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নই তাদের প্রতিদিনের জীবনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। তবে, এই নির্বাসন শুধুই নিরাপদ আশ্রয় নয়, বরং নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ, সন্দেহ ও রাজনৈতিক চাপও নিয়ে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন কোটা-বিরোধী আন্দোলনের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে গেছেন। এরপর প্রায় ১,৩০০ জন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও মধ্যপর্যায়ের নেতা, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মী ভারতের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসিত হন। তারা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ মনে করছেন এবং হাসিনার দেশে ফিরে আসাকে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন। এই নেতা-নেত্রীরা শুধু রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য নয়, ব্যক্তিগত সুবিধা এবং বিদেশে থাকার সুযোগও খুঁজছেন, যা সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছে।

নিউ টাউনে বসবাসরত সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ. আরাফাত বলেন, “আমার জীবন এখন শুধুই কাজ। শখের বা বিনোদনের জন্য সময় নেই। হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুবে গেছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য—দেশকে আবার ঠিক করা।” আরাফাতের দৈনন্দিন জীবন ঘুম, কাজ, অনলাইন মিটিং এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তিনি নিয়মিত বাংলাদেশের তৃনমূল কর্মী ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কলকাতায় তাঁর পরিবারসহ আছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে দিল্লি যাত্রা করেন দলীয় বৈঠক ও ভারতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে, তিনি রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি পারিবারিক নিরাপত্তা ও নিজের সুবিধা নিশ্চিত করতে ভারতীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। যদিও তাদের কাজ দেশের জন্য হওয়া উচিত, বাস্তবে এটি রাজনৈতিক স্বার্থ এবং বিদেশে অবস্থানের সুবিধা অর্জনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

পালিয়ে যাওয়া এইসব নির্বাসিত নেতাদের জীবন শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ নয়। কিছু নেতারা তাদের ব্যক্তিগত যত্ন—যেমন ব্যায়াম, রূপচর্চা, ঘুরাফেরা এবং চুল প্রতিস্থাপনে ব্যস্ত থাকছেন। কক্সবাজারের এক সাবেক সংসদ সদস্যের ১,৫০০ বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্টে মাসিক ৩০,০০০ টাকায় থাকা, পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে রান্না শেখা এবং স্থানীয় শরীরচর্চা (ফিটনেস) ক্লাসে যোগ দেওয়া—সবকিছু রাজনৈতিক অস্থিরতার আড়ালে একটি স্বার্থপর জীবনধারার ইঙ্গিত দেয়।

বহুদূরে কানাডার অটোয়াতে বসবাসরত আওয়ামী পন্থী কূটনীতিক হারুন আল রশিদ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লেখালিখি করছেন। তবে তার কর্মকাণ্ডও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ইউনুস প্রশাসনের সমালোচনার সাথেই যুক্ত। এইসব কর্মকান্ডে দেখায় যে বিদেশে অবস্থানকারীরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং ব্যক্তিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছেন।

পালিয়ে যাওয়া নির্বাসিত নেতাদের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদেশে অবস্থান শুধুই দেশের জন্য নৈতিক বা দায়িত্বশীল কাজ নয়। বরং এটি প্রায়শই ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, বিদেশে আরামদায়ক অবস্থান এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার দৃষ্টান্ত। তাদের ব্যক্তিগত ও পার্টি কার্যক্রম রাজনৈতিক স্বার্থ ও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।

কলকাতায় নির্বাসিত আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবন রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যক্তিগত সুবিধা এবং বিদেশে থাকা সুবিধার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা দেশ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু নিজেদের স্বার্থ এবং দলের উদ্দেশ্যের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধুই সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করছে না, বরং নেতাদের নৈতিক দিক এবং দেশপ্রেমকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here