সুরা মুহাম্মদের গুরুত্ব ও শিক্ষা

0
21
সুরা মুহাম্মদের গুরুত্ব ও শিক্ষা
সুরা মুহাম্মদের গুরুত্ব ও শিক্ষা

সুরা মুহাম্মদ পবিত্র কোরআনের ৪৭তম সুরা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর নামে অবতীর্ণ এ সুরাটি মদিনায় হিজরতের পর নাজিল হয়। যেহেতু এতে যুদ্ধসংক্রান্ত আলোচনা বেশি, তাই এর অপর নাম ‘কিতাল’। মূলত হিজরতের পরে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগমুহূর্তেই মুসলমানদের যুদ্ধসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা এবং ঈমানের শিক্ষা দিতে এ সুরাটি অবতীর্ণ হয়েছিল।

সুরা মুহাম্মদে মুমিনদের জন্য রয়েছে জীবনদর্শন, সমাজসংস্কার ও আখেরাতের প্রস্তুতির অমূল্য দিকনির্দেশনা। এর প্রধান কিছু শিক্ষা বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

১. ঈমানের আহ্বান ও কুফরির ক্ষতি

সুরার সূচনায় বলা হয়েছে, যারা কুফরি করে ও আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাদের সব কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর নাজিলকৃত সত্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেবেন এবং তাঁদের অবস্থা সংশোধন করবেন। (আয়াত ১-২)

২. সত্যের অনুসরণ

ঈমানের পর মুমিনের দায়িত্ব হলো সত্য দ্বীনের অনুসরণ করা। কোরআনে বলা হয়েছে, অবিশ্বাসীরা মিথ্যার অনুসরণ করে, আর মুমিনরা অনুসরণ করে প্রতিপালকের প্রেরিত সত্যের। (আয়াত ৩)

৩. আল্লাহর সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা

মুমিন যখন দ্বীনের পথে অটল থাকে, তখন আল্লাহর সাহায্যই তাকে স্থিতিশীল করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।’ (আয়াত ৭)

৪. কিয়ামতের নিকটবর্তীতা

মানুষের জন্য কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। সেদিন প্রত্যেক বান্দা তার কর্মফল অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি শুধু এ জন্য অপেক্ষা করছে যে হঠাৎ তাদের কাছে কিয়ামত এসে পড়ুক? কিয়ামতের আলামত তো এসে পড়েছে। কিয়ামত চলে এলে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কিভাবে!’  (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৮)

৫. আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা

ক্ষমতা ও দুনিয়াবি লোভে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা নিন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাহলে ক্ষমতা পেলে কি তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে?’ (আয়াত ২২-২৩)

৬. কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা

আল্লাহ কোরআনকে মানবজীবনের দিকনির্দেশনা করেছেন। কিন্তু এর প্রকৃত শিক্ষা পেতে হলে চিন্তা-গবেষণা আবশ্যক। ‘তারা কি কোরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (আয়াত ২৪)

৭. মুরতাদদের ভ্রান্ত ধারণা

মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে মুরতাদ বলা হয়। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎপথ স্পষ্ট হওয়ার পরও যারা মুরতাদ হয়, শয়তান তাদের কাজ (নিজেদের কাছে) সুন্দর করে দেখায় এবং তাদের মিথ্যা আশা দেয়।’ (আয়াত : ২৫)

৮. মৃত্যুর সময় থেকেই শাস্তির সূচনা

যারা পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্য, মৃত্যুর সময় থেকেই তাদের শাস্তি শুরু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণহরণ করবে, তখন তাদের দশা কেমন হবে?’ (আয়াত : ২৭)

৯. বিদ্বেষ লুকানো যায় না

অন্তরের বিদ্বেষ এমন, যা লুকিয়ে রাখা যায় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা কি মনে করে যে আল্লাহ কখনো তাদের মনের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?’ (আয়াত : ২৯)

১০. অবিশ্বাস নিয়ে মৃত্যু ভয়াবহ

অবিশ্বাস নিয়ে মারা গেলে পরকালে শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ থাকে না। আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাদের কিছুতেই ক্ষমা করবেন না।’ (আয়াত : ৩৪)

১১. ধনসম্পদ ও দানশীলতা

এ সুরায় সম্পদ নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ধন-সম্পদ আল্লাহর দান, যা মানুষের পরীক্ষা হিসেবে দেওয়া হয়। মুমিনের দায়িত্ব হলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। কৃপণতা আল্লাহর অপছন্দনীয়। নবীজি (সা.) নিজেও কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। আল্লাহ বলেন, ‘দেখো, তোমাদেরই বলা হচ্ছে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে; অথচ তোমাদের অনেকেই কৃপণতা করছে।আল্লাহ অভাবমুক্ত, আর তোমরাই অভাবগ্রস্ত।’ (আয়াত ৩৮)

সুরা মুহাম্মদ মুমিনদের জন্য একদিকে যেমন ঈমান ও সৎকাজের শিক্ষা দেয়, অন্যদিকে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা, সম্পদে দানশীলতা এবং আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসার দিকনির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে অবিশ্বাসীদের পরিণতি এবং কিয়ামতের সতর্ক বার্তাও এ সুরায় বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুরা মুহাম্মদের আলোকে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন, আমিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here