মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার বড়ুরিয়া গ্রাম

0
38
মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার বড়ুরিয়া গ্রাম
মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপার বড়ুরিয়া গ্রাম

গ্রামের পর গ্রাম নদী ভাঙনের গর্জন। গ্রামবাসির কপালে চিন্তার ভাজ। কখন যেন সর্বনাশী গড়াই কেড়ে নেয় শেষ সম্বল ভিটেবাড়ি। সাম্প্রাতিক সময়ে তীব্র নদী ভঙনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। ইতিমধ্যে গ্রামের মানুষ তাদের মাঠের ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। প্রাই প্রতি বছরই মানচিত্র থেকে মুছে যেতে থাকে ভিটেবাড়িসহ ফসলি জমি। নতুন করে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা এবং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া ও উলুবাড়িয়া গ্রাম। প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে গড়াই নদীভাঙনের কবলে পড়ে বদলে গেছে নদীর গতিপথ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, খুলুমবাড়ি, মাদলা, কাশিনাথপুর ও লাঙ্গলবাঁধ। ভিটেবাড়ি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান সেচ খালের কাছে।

সরোজিমনে নদী ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষ আতংকে বসবাস করছেন। নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। পাট, কলা ক্ষেত ও মরিচের জমিসহ ভাঙতে শুরু করেছে ফসলী জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও শ্রোতের তীব্রতায় ভেসে যাচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। গড়াই নদীর ভাঙ্গনে ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে গ্রামের মানচিত্র।

শৈলকুপা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শৈলকুপায় গড়াই নদীর বহমান অংশ ২০ কিলোমিটার। যার মধ্যে বড়ুরিয়া গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহমান দেড় কিলোমিটার. কৃষ্ণনগর এক কিলোমিটার, গোসাইডাঙ্গা পাঁচ’শ মিটার, মাদলা এলাকায় দেড় কিলোমিটার, মাঝদিয়া গ্রামে এক কিলোমিটার এবং লাঙ্গলবাধ এলাকায় পাঁচ’শ মিটার ভাঙ্গনপ্রবন। তবে বড়ুরিয়া গ্রামের দেড় কিলোমিটার অংশে বেশী ভাঙ্গন তীব্রতা দেখা দিয়েছে।

তথ্য জানা যায়, গড়াই নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর আদর্শ গ্রাম। এপারের জমি ভেঙে ওপাশে জেগে ওঠা চরের জমিতে কুষ্টিয়ার মানুষ শৈলকুপার কোন মানুষকে যেতে দেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার এখন পর্যন্ত চর উদ্ধারেও কেউ ব্যবস্থা নেয় না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ডিপিপি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। চলতি বছরে গড়াইয়ের ভাঙন রোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে সমীক্ষা কাজের আওতায় ১৭৫ কেজি ওজনের বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পহেলা মে থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। ১৭ কোটি টাকা’র এই প্রকল্পিটি বাস্তবায়িত হবে চার ধাপে।

বড়ুরিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর ইসলাম  জানান, তার ১০ বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। নদীর ভাঙন যেভাবে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তাতে ভিটেবাড়িও ঠেকাতে পারবো না।

বড়ুরিয়া গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, ১৯৬২ সালের পর থেকে নদী ভাঙন শুরু হলেও গত ২০ বছরে তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুন। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বড়ুরিয়া মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ছিল ১৪ শ’ ৫৭ বিঘা। আর খাস জমি আছে ১৪৩ বিঘা। নদী ভঙনের ফলে এখন জমির পরিমাণ দাড়িয়েছে গড়ে ২ শ’ ৫০ বিঘায়। গ্রামটিতে বসবাস করতেন ৭ শত পরিবার, কিন্তু এখন বসবাস করেন ২ শত পরিবার। বাকী ৫ শত পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

বড়ুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুন্দরী খাতুন বলেন, আমাদের প্রায় ৩০ বিঘা জমি ছিল, এখন তা ১০ বিঘায় দাড়িয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা মনি মোল্লা বলেন, বড়ুয়া গ্রামের প্রায় ১৪ শ’ বিঘা জমি চলে গেছে কুষ্টিয়ার অংশে।

তিনি আরো জানান, এপাশ থেকে ভেঙে নদীর ওপারে চর জেগে উঠেছে। সেখানে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার মানুষ জবরদখল করে খাচ্ছে। প্রশাসনের কেউ উদ্যোগ নেয়না এই জমি উদ্ধারে। ফলে ক্রমেই গ্রামের মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস  বলেন, বর্তমানে বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষা কাজ চলমান আছে। জরুরী ভিত্তিতে ১৭ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলা কাজ চলমান আছে। আগামী ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত কাজটি চলবে। এরপর স্থায়ী কাজ করা হবে বরাদ্দের ভিত্তিতে। নদীর এই অংশটুকু অবতল হওয়াতে পানির চাপ বৃদ্ধিতে পলি সরে ভাঙ্গন দেখা দেয়।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল  বলেন, শৈলকুপা অংশ ভেঙে নদীর ওপারে কুষ্টিয়া অংশে জেগে ওঠা চরের জমি উদ্ধার ও সেখানে যেন শৈলকুপার মানুষ চাষাবাদ করতে পারে সে বিষয়ে উদ্দোগ গ্রহন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য দপ্তরের সম্মিলিত বৈঠকের পর জরিপ করে সীমানা নির্ধারনের জন্য সরকারের জরিপ অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই বিধিসম্মত ভাবে নদী পাড়ের সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here