নিউ জার্সিতে কৃষ্ণাঙ্গ ভাড়া করে হত্যার হুমকিতে আতঙ্কিত বাংলাদেশি পরিবার

0
135

ইমা এলিস/ নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে এসে স্ত্রীসহ তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশি এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ অব্যাহত হত্যার হুমকি দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট বার্লিন পুলিশের ‘ধরিয়ে দিন’ তালিকাভুক্ত বাংলাদেশি যুবক গৌরব সাঞ্জারি। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও জামিন পাওয়া গৌরবের বিরুদ্ধে নিউ জার্সি সুপরিয়র আদালত থেকে ৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পুলিশের হাতে পুনঃ গ্রেপ্তারের ভয়ে প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় গৌরব।

বাংলাদেশে বসেই স্ত্রী ও তার পরিবারকে অব্যাহত হত্যার হুমকির পাশাপাশি ভয়ানক কল্পকাহিনী সাজিয়ে গণমাধ্যমকে বোকা বানাচ্ছেন। তিনি অজ্ঞাত (নম্বর বিহীন) ফোন নম্বর ব্যবহার করে নিউ জার্সির ওয়েস্ট বার্লিন পুলিশকেও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গৌরব সাঞ্জারি বাংলদেশে গিয়ে কিছু বেসরকারি টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাম্প্রতি তার স্ত্রী কনিকা মজুমদার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। অভিযোগে বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায় একটি মানবপাচার চক্র। এমনকি দেহ ব্যবসায়ও বাধ্য করা হয় তাকে। একপর্যায়ে মুক্তিপণ হিসেবে দেশে থাকা পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে ওই চক্রটি।
গৌরব সাঞ্জারির এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে তার স্ত্রী কনিকা মজুমদার  এ প্রতিনিধিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রে যৌনকর্ম পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে কখনই পুলিশের কাছে কিংবা আমাকেও জানায়নি এ ধরনের অভিযোগের কথা। উল্টো অভিযোগ করে গৌরবের স্ত্রী বলেন, পাইলস অপারেশনের এক্স-রে ও কোলনোস্কোপির ছবি দেখিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলে বেড়াচ্ছেন। এসব করে গৌরব আমাকে এবং আমার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্নই করেননি, কলঙ্কিতও করেছেন। তার এসব বক্তব্যকে সম্পূর্ন কাল্পনিক, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই বলে দাবি করেন তিনি।
কনিকা মজুমদার আরও বলেন, নিউ জার্সির ক্যামডেন সুপরিয়র আদালত থেকে গত ১৬ নভেম্বর ২০২৩ সালে ৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে (মামলা নম্বর-২২০০৪৪৫৫)। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলাতক একজন দাগী আসামিকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পালিয়ে থেকে তিনি ই-মেইলে কৃষ্ণাঙ্গদের ভাড়া করে পরিবারের সব সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তার হুমকির ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন কনিকার পরিবার। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ ডিপার্টমেন্টেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

কনিকা আরও বলেন, গৌরব সাঞ্জারির দেশের বাড়ি চট্টগ্রামের জুবলি রোডে। বাবা শিবু শীল একজন লোহালক্কড় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে নিউ জার্সি স্টেটের ক্যামডেন কাউন্টি ফ্যামিলি কোর্টের চূড়ান্ত আদেশের শুনানিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকছেন। এর ফলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়াও গৌরবের বিরুদ্ধে নিউ জার্সি সুপরিয়র আদালত থেকে বিভিন্ন অভিযোগে ১৬ নভেম্বর ২০২৩ আরও ৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ক্যামডেন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিসও গৌরব সাঞ্জারির বিরুদ্ধে প্রাক-অভিযোগ শুনানির দিন ধার্য করেন। গৌরব প্রাক-অভিযোগ শুনানির দিনেও অনুপস্থিত ছিলেন। তাই, ক্যামডেন কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিস থেকেও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বর্তমানে গৌরব যুক্তরাষ্ট্রে একজন পলাতক আসামি। আমেরিকান মার্শাল অফিস এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তা্রের জন্য ‘রেড এলার্ট জারি’ করা হয়।

গৌরব প্রতিদিন বিভিন্ন নম্বর ব্যবহারের মাধ্যমে ফোন করে কনিকার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং তার বন্ধুদের হুমকি দেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার যেমন ডিজিএফআই, এনএসআই নামও ব্যবহার করছেন ফোন করার সময়। ফোন করেই বলেন ‘হ্যালো আমি ডিজিএফআই, এনএসআই অফিস থেকে বলছি।’

কনিকা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার পরিবারকে হেয় করতে গৌরবের বাবা শিবু শীল চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আমিসহ পরিবারের সদস্যদের নামে একটি মানব পাচার মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগ খুবই হাস্যকর। মামলাটি মানব পাচার আইনে হলেও অভিযোগ করা হয়েছে যৌন নির্যাতনের।
এছাড়াও গৌরব তার ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে আমার দুলাভাইকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের অপরিচিতদের ফোন ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করার ভয় দেখাচ্ছেন। স্বজনদের মেয়েদের কিডন্যাপ করার হুমকি দিচ্ছেন।

কনিকার বড় বোন শিল্পী মজুমদার বলেন, গৌরব আমার পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয় কাগজপত্র ও কিছু ডলার নিয়ে  যায়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বড় ভাইয়ের স্ত্রীর (প্রণিতা মজুমদার) বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা ফৌজদারি মামলা করে তার কপি ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসে পাঠিয়েছেন।
গৌরবের বাবা বাদী হয়ে চট্রগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট কোর্টে কনিকার বড় ভাইয়ের স্ত্রী, তার বড় ভাইকে আসামি করে আরেকটি ফৌজদারি মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ছেলে গৌরব সাঞ্জারি কোথায় আছেন তিনি জানেন না।

কনিকার বড় ভাই রাজিব মজুমদার বলেন, গৌরব বেশ কয়েকটি মামলা দিয়ে দেশে আমার পরিবারকে হয়রানি করছে। ভুয়া মামলা্র কাগজ দেখিয়ে আমার স্ত্রী সন্তানের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা বাতিল করার সব বন্দোবস্ত সে করেছে। দেশে আমার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

কনিকার মা বীণা মজুমদার বলেন, আমেরিকায় যা ঘটেছে এর জন্য দেশে আমার ছেলে পরিবারকে জীবন নাশের হুমকিসহ ছোট নাতি নাতনিরা কেন তার খেশারত দেবে। তাদের ভবিষ্যৎ জীবনটাকে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তসহ আমেরিকা থেকে পলাতক আসামীর গ্রেপ্তার দাবি করছি।
২০১৮ সালের নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ফেরার সময় কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিউইয়র্কগামী একটি ট্রানজিট (সংযোগ) স্থলে প্রথম দেখা হয় গৌরব-কনিকার। এরপর দীর্ঘদিনের পারিবারিক আলোচনার মধ্যে উভয়ের সম্মতিতে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। নিয়ম অনুসারে কনিকার স্বামী গৌরব সাঞ্জারির অভিবাসন ভিসা নিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন।
কিছুদিন দাম্পত্য জীবন ভালই ছিল। গ্রীন পাবার পর থেকেই সংসারে কলহ শুরু হয়। প্রথমে বাজে আচরণ করতে থাকেন। অশ্লীল ভাষায় গালিগাল শুরু করেন কনিকাকে। এক পর্যায়ে দিন দিন এর মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। মারধর করা শুরু করেন। অত্যাচারের মাত্রা সীমার বাইরে চলে যায়।
২০২২ সালের ২৪ জুলাই কনিকাকে বেদম মারধর করেন। গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে রক্ষা করেন। পরে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এ ঘটনার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দুইদিন পর গৌরব সাঞ্জারি জেল থেকে জামিন নিয়ে বের হন। নিউ ইয়র্কে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here