চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শিশু মাইশা খাতুন (৭) বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে বলে আগে দাবি হলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে পুলিশ বলছে, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটিকে অন্য কেউ নয়, হত্যা করেছেন তার আপন মা পপি খাতুন (২৫)। ঘাতক পপি খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।
সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান এসব তথ্য জানান।
এর আগে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে এদিন ভোরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে (পিও ভিজিট) যান পুলিশ সুপার। এরপর কৌশলে পপি খাতুনকে নিজের গাড়িতে করেই পুলিশ হেফাজত নেন তিনি।
পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, শিশু মাইশা তার মায়ের সাথে আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করত। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে মাইশার মা পপি খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে যায় বাড়িতে। ওই সময় মাইশার গলায় মোবাইলফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল। পপির প্রতিবেশীদের জানান, তার মেয়ে মাইশা বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছে। প্রতিবেশীরা মাইশাকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাইশাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সাথে মাইশার গলায় দাগ থাকার কথাও পুলিশকে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মাইশা খাতুন বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায়নি, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ শিশুটির পরিবারকে জানালে মাইশার নানা ভোগাইলবগাদী গ্রামের মরহুম নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার আরো জানান, মাইশাকে তার মা পপি খাতুন গলা টিপে হত্যা করেন। ৫ মে আলমডাঙ্গার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহুরা বেগমের আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন পপি। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
তিনি জানান, পপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে। স্বামীর সাথে দাম্পত্য কলহের কারণে আগেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল এবং পপি খাতুন তার মেয়ে মাইশাকে নিয়ে নিজের বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করছিলেন। পপি খাতুন পুলিশের কাছে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে মাইশা নাবালিকা। তার বাবা হয়তো আরেকটি বিয়ে করবেন। পপিরও অন্য জায়গায় বিয়ে হতে পারে। তখন মাইশাকে দেখার কেউ থাকবে না। মাইশার জীবন কাটবে কষ্টে। প্রতিবেশীদের একটি মেয়েকে এভাবে বড় হতে দেখেছেন পপি। এসব চিন্তাভাবনা থেকেই মাইশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, ডিআই-১ ইন্সপেক্টর জিহাদ খান, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ দাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।