প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মহল সরকারের উন্নয়ন কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। জাতির পিতার বেলায়ও এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তার কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এখন আমার বেলায়ও তাই হচ্ছে। যতই প্রশ্নবিদ্ধ করা হোক না কেন, জনগণের কাছ থেকে আমাকে দূরে সরানো যাবে না। আমার ক্ষমতার মূল শক্তি এ দেশের জনগণ।
বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। টানা চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। যে কাজগুলো আমরা করেছি, তার সুফলটা দেশবাসী পাচ্ছে, সেটাকে স্বীকার করেন। কিন্তু প্রত্যেকটা কাজকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়, হ্যাঁ তাতে কী করতে পারেন, জনগণের কাছ থেকে তো আমাকে দূরে সরাতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, আমার একটাই শক্তি, আর তা হচ্ছে জনগণ। তাদের শক্তি নিয়েই আমি চলি। সেখানে একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছে জনগণের মাঝে যে, আমি তাদের জন্য কাজ করি। কাজেই ওই আস্থা-বিশ্বাসটাই হচ্ছে আমার একমাত্র সম্বল। আর এই সম্বল নিয়েই আমি চলি, এজন্য আমি কাউকে পরোয়া করি না। যতক্ষণ আমার দেশবাসী আমার পাশে আছে, আমি কাউকে পরোয়া করি না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ আমি জানি, আমার বাবার সঙ্গেও একই জিনিস হয়েছে। যতগুলো কাজ তিনি করে গেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে; সংবিধান দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নাই যার ভিত্তিটা তিনি তৈরি করে দেন নাই। তারপরও তার সমালোচনা, তার বিরুদ্ধে নানা কথা লেখা, অনেক কিছু করে তাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন পারেনি তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও হত্যার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি তো বেঁচে গেছি, সেটাও আমার জনগণ এবং দলের লোকেরা সব সময় আমাকে ঘিরে রেখেছে। নিজেরা জীবন দিয়ে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। আমি এখন জনগণের জন্য কাজ করে যেতে চাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিগত ১৫ বছরে যে পরিমাণ কাজ করেছে অন্যরা ২৯ বছরেও সে কাজ করতে পারে নাই। পারবেও না, কারণ প্রকল্প দিয়েই তো আগে টাকা খাওয়া। আর আমরা প্রকল্প শেষ করেই ছাড়ি, টাকা খাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ মেট্রোরেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন? এর কী প্রয়োজন ছিল। আজকে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার মানুষ মেট্রোরেল দিয়ে চলতে পারে, ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ চলাচল করতে পারবে দিনে। এটায় যারা চড়ছে তারা সুফল পাচ্ছে। যারা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তারা লজ্জা পাচ্ছে কি না জানি না। কেউ কেউ আবার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যদিও এখান থেকে সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ আমরা পাব। এজন্য সেখানে আমরা আরও একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করব। শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল, আজকে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আমরা উৎপাদন করতে পারি।
সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কল্যাণে কী করণীয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করি। ভোগ করবেন সবাই আর কথায় কথায় ব্যঙ্গ করবেন আর প্রশ্ন তুলবেন। প্রশ্ন তোলার আগে নিজেরা কী করেছেন? কোন দল করেন, সেই দলের বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে অপকর্মগুলো একটু চিন্তা করে নেবেন। আয়নায় নিজেদের চেহারাটা আগে দেখেন।
অতিমারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন-পালটা স্যাংশনে বিশ্বমন্দা ছোঁয়ায় দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষদের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তার সরকার প্রায় এক কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। তার সরকারের বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপের ফলে অতি দরিদ্রের হার আজকে কমে ২৫ দশমিক ১ ভাগ থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগে এসেছে।
তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ আইনে কাউকে কিন্তু দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি। বরং বেসরকারি খাতে প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছিল সামিট গ্রæপ খুলনায়। তারা ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পন্ন করতে দেরি করেছিল, যে কয়দিন দেরি করেছিল প্রতিদিন ১০ হাজার ডলার করে তাদের জরিমানা দিতে হয়েছে। আর সেই জরিমানা আমি আদায় করেছি।
তিনি বলেন, আজকে অনেকে গণতন্ত্রের কথা বলে। গণতন্ত্রের প্রবক্তা হয়ে গেছে কেউ কেউ। আমার প্রশ্ন যারা এখন গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করছে তাদের জন্মটা কি গণতন্ত্রের মধ্যদিয়ে হয়েছে? না ঐ রক্তাক্ত হাতে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল সেই সেনা কর্মকর্তার পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দল তারা? যারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল।
সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আনার নির্দেশ : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ছাতক সিমেন্ট কারখানাসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে অর্থ বিভাগ ব্যবস্থা নেবে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
একনেক বৈঠকে খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রকল্প থেকে ‘শেখ হাসিনা’ নামটি বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে উপস্থিত সবার অনুরোধে এই প্রকল্পে তার নামটি থাকলেও আগামীতে কোনো প্রকল্পে নিজের নাম না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শেখ হাসিনার ম্যুরাল না করে ওই টাকা অন্য কোনো স্থানে ব্যয় করতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগামীতে যেকোনো ব্রিজ নির্মাণে বিশেষ সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদীর পানিপ্রবাহ যাতে নষ্ট না হয় এবং ব্রিজের উচ্চতা ঠিক রাখতে হবে।
‘বিএফডিসি রেডি টু কুক ফিশ’ ও মিল্কিং মেশিন হস্তান্তর : বাসস জানায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান এমপির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘বিএফডিসি রেডি-টু-কুক ফিশ’ সামগ্রী হস্তান্তর করেছে। একই সঙ্গে গরুর দুধ আহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি মিল্কিং মেশিনও এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেডি টু কুক ফিস কার্যক্রমের ফলে কর্মজীবী মহিলারা অনেক উপকৃত হবেন। তিনি কর্মজীবী মহিলাদের রান্না সহজীকরণে রেডি-টু-কুক ফিশ প্রস্তুতকরণ, বাজারজাতকরণ ও বাজার স¤প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি দিকনির্দেশনা দেন।