নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা’ সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী’ পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছে। রোববার (২৭ অক্টোবর) এই নির্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদেই ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম আর সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন সোসাইটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। খবর ইউএনএ’র।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক সিটির ৫টি ভোট কেন্দ্রে ৫৮টি মেশিনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৬১৩ জন। কুইন্সের উডসাইড, জ্যামাইকা এবং ওজনপার্ক ছাড়াও ব্রুকলীন এবং ব্রঙ্কসের ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে বিরতিহীন। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ব্রকলীন কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ব্রকলীন কেন্দ্রে বেলা আড়াইটার দিকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সালেহ আহমেদ মানিক নামের একজন আহত হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। মনিক জানান, কে বা কারা অতর্কিতে আমার উপর হামলা করে এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে। তাদের মধ্যে ২/১জনকে আমি চিনতে পেরেছি। কিন্তু কেন আমার ওপর হামলা হলো তা বুঝতে পারিনি। হামলার পর আহত হলে অ্যাম্বুলেস যোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
২০২৫-২০২৬ সালের জন্য এবারের নির্বাচনে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দি ‘সেলিম-আলী’ ও ‘রুহুল-জাহিদ’ প্যানেলের ৩৭জন প্রার্থী ভোটে লড়েন। নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পুন:নির্বাচিত হন। এবারই প্রথম ‘রুহুল-জাহিদ’ প্যানেলে থেকে তিনজন নারী প্রার্থী দাঁড়িয়েছিলেন।
ভোট গ্রহণ শেষে রোববার রাত ১১টার দিকে গুলশান ট্যারেস কেন্দ্র থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় কমিশনের সদস্য এবং প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারগণ মঞ্চে ছিলেন। অপরদিকে প্রার্থীরা সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। ফলাফল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনারগণ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, সোসাইটির ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- আব্দুল হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বাদল ও আহবাব চৌধুরী খোকন।
এদিকে নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পর বিজয়ী ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থী, কর্মী, সমর্থক আর শুভাকাঙ্খীরা উৎসবে মেতে উঠেন। এসময় তারা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন।
‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন: সভাপতি- আতাউর রহমান সেলিম, সিনিয়র সহ সভাপতি- মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি- কামরুজজামান কামরুল, সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ আলী, সহকারী সাধারণ সম্পাদক- আবুল কালাম ভুইয়া, কোষাধ্যক্ষ- মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমী, সাংগঠনিক সম্পাদক- ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- অনিক রাজ, প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক- রিজু মোহাম্মদ (বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত), সমাজকল্যাণ সম্পাদক- জামিল আনসারী, সাহিত্য সম্পাদক- মোহাম্মদ এ আখতার বাবুল, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক- হাসান জিলানী এবং কার্যকরী সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ সাদিক, আবুল কাশেম চৌধুরী, মনসুর আহমেদ, হারুন চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও হাসান খান।
নির্বাচন ঘিরে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের প্রতিশ্রুতি ছিলো- কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ করে মূলধারায় শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠা, নতুন প্রজন্মের সাথে সোসাইটির সেতু বন্ধন সুদৃঢ় করে গণমুখী, কল্যাণকর ও জবাবহিতামূলক সার্বজনীন সংগঠনে রূপান্তর করা।
কে কত ভোট পেলেন:
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারী ফলাফলে সভাপতি পদে আতাউর রহমান সেলিমের প্রাপ্ত ভোট ৫,২৮৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি রুহুল আমীন সিদ্দিকীর প্রাপ্ত ভোট ৩,৮২০। ভোট ব্যবধানে ১,৪৬৯ ভোট বেশী পেয়ে আতাউর রহমান সেলিম জয়ী হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী মোহাম্মদ আলীর প্রাপ্ত ভোট ৫,১৭৯। তার একমাত্র প্রতিদ্ব›িদ্ব জাহিদ মিন্টুর প্রাপ্ত ভোট ৩,৮৭২। ভোট ব্যবধানে ১,৩০৭ ভোট বেশী পেয়ে মোহাম্মদ আলী জয়ী হয়েছেন।
অপরদিকে সিনিয়র সহ সভাপতি পদে বিজয়ী মহিউদ্দিন দেওয়ানের প্রাপ্ত ভোট ৫,৪৯৪। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি ফারুক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৩,৪০৫।
সহ সভাপতি বিজয়ী মোহাম্মদ কামরুজ জামান-এর প্রাপ্ত ভোট ৫,৪৮০। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি আমিনুল চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৩,৪০৯।
সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী আবুল কালাম ভূইয়ার প্রাপ্ত ভোট ৫,০৮৫। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি সারোয়ার খান বাবু’র প্রাপ্ত ভোট ৩,৮৬৪।
কোষাধ্যক্ষ পদে বিজয়ী মফিজুল ইসলাম ভূইয়া (রুমি)-এর প্রাপ্ত ভোট ৫,২৪২। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি নওশাদ হোসাইনের প্রাপ্ত ভোট ৩,৬২৬।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী ডিউক খানের প্রাপ্ত ভোট ৫,২৩০। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি সাদী মিন্টু’র প্রপ্ত ভোট ৩,৬৩৯।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে বিজয়ী অনিক রাজ-এর প্রাপ্ত ভোট ৫,০৬৯। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি মনিকা রায় চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৩,৭২৭।
প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে বিজয় জামিল আনসারীর প্রপ্ত ভোট ৫,২০৭। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি নাদির আইয়ুব চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৩,৫৮৮ ভোট।
সাহিত্য সম্পাদক পদে বিজয়ী মোহাম্মদ এ আখতার বাবুল-এর প্রাপ্ত ভোট ৪,৭৯৩। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি রোমানা আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৪,০৫২।
ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক বিজয়ী আশ্রাফ আলী খান লিটনের প্রাপ্ত ভোট ৫,০৯১ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি আলমগীর হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৩,৬৮২।
স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বিজয় হাসান জিলানীর প্রাপ্ত ভোট ৫,০৩৪। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি শাহানাজ হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ৩,৭৯৪।
এছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে বিজয়ীদের মধ্যে মোহাম্মদ সাদিক পাটোয়ারীর প্রাপ্ত ভোট ৫,১৫৮, হারুন চেয়ারম্যানের প্রাপ্ত ভোট ৫,২১৮, আবুল কাশেম চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৫,১৫৮, জাহাঙ্গীর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রাপ্ত ভোট ৫,২১৪, মনসুর আহমেদের প্রাপ্ত ভোট ৫১১৯ এবং হাসান খানের প্রাপ্ত ভোট ৫,০৩৩।
অপরদিকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে বিজয়ী ‘রুহুল-জাহিদ’ প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ রব মিয়ার প্রাপ্ত ভোট ৩,৮৪৭, মোহাম্মদ তাজু মিয়ার প্রাপ্ত ভোট ৩,৫৬০, এমডি এন ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৩,৬৩৫, একেএম রফিকুল ইসলাম ডালিমের প্রাপ্ত ভোট ৩,৭১৫ এবং সাইফুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৩,৫৫৪।