রতন তালুকদারঃ বিপ্লবী জুলাই মাসের গোড়ার কথা, ছাত্রদের যৌথ মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চলাকালীন বারবার বলা হয়েছিল ‘বৈষম্যহীন’ বাংলাদেশের কথা। তারপর ছাত্রসমাজ আন্দোলনে বিজয়ী হয়। আন্দোলনের তীব্র চাপে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে পালিয়ে যায়। ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর থেকেই বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। প্রথমে শুরু হয়েছিল সরাসরি হিন্দুদের ওপর আক্রমণ। মাঝে পাহারা দিয়ে দুর্গাপূজাও হল! ধীরে বহে মেঘনা-র মত জল আরও ঘোলা হতে শুরু করে।
‘বৈষম্যহীন’ বাংলাদেশে ঘুরপথে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নেমে আসে নির্যাতন ও সহিংসতার ভয়াল দৃশ্যপট। দেশে দলবদ্ধভাবে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়, হেনস্তা তো আছেই! অভিযোগ রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন সামাজিকভাবে হিন্দুদের বয়কটের ডাক দেয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা,পুজা-পার্বনে বাঁধা দেয়া। সম্প্রতি হিন্দু ধর্মাবলম্বী একাধিক শিক্ষক,অধ্যাপক চাপে পড়ে ইস্তাফা দিয়েছেন। ইস্তাফা না দিলে খুনের হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায় । সরাসরি বরখাস্ত তো এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
পুলিশ বাহিনীতেও বেছে বেছে হিন্দু পুলিশকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে, রাজশাহীর পুলিশ অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২৫২ জন সাব ইনসপেক্টরকে শৃঙ্খলাভঙ্গের মামুলি অভিযোগে এনে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ৯১ জন ছিল হিন্দু।
ক্রমাগত কোণঠাসায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পিঠ আর দেয়াল থেকে দুরে নয়! চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘি ময়দানে লক্ষ হিন্দুদের সমাবেশ সেই গল্পই বলে। ইসকন প্রভুদের দেশদ্রোহি বানানোর নাটক কাজে আসবে না। অন্তরবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনুস আপনি বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় অসহায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাচাঁন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ওরা বৈষম্যের শিকার হবে কেন ? ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করবে না।’ বাংলাদেশি হিন্দুরা আর ভারতে পালিয়ে যাবে না। এই দেশ ওঁদের মাতৃভূমি।
রতন তালুকদারঃ সম্পাদক,সাপ্তাহিক জন্মভূমি। নিউইর্য়ক।