এক দিন অন্তর খেলত ৫০০ বল! জমি বিক্রি করে দেওয়া বাবার ‘হাত ধরে’ আইপিএলে ১৩ বছরের কোটিপতি বৈভব

0
16

রোজ অনুশীলনের সুযোগ হত না। কারণ, বিহারের সমস্তিপুরের বাড়ি থেকে পটনার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। তাই বাবা ছেলেকে অ্যাকাডেমিতে নিয়ে আসতেন এক দিন অন্তর। ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করার স্বপ্ন দেখা এবং তার জন্য জমি বিক্রি করে দেওয়া বাবা যে দিন নিয়ে আসতেন, সে দিন সেই ছেলে ৫০০ বল না খেলে নেট ছাড়ত না। ১৩ বছরের সেই বৈভব সূর্যবংশী সাধারণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে রাজস্থান রয়্যালসের নেটে এবং সেখান থেকে ছ’দিনের মধ্যে ঢুকে পড়ল আইপিএলে।

সোমবার আইপিএলের নিলামে রাজস্থান এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে লড়াই হল বৈভবকে নিয়ে। দুই দলই তাকে নেওয়ার জন্য ঝাঁপাল। যে কারণে ৩০ লক্ষ থেকে তার দাম পৌঁছে গেল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকায়। শেষ পর্যন্ত রাজস্থানই নিল ১৩ বছর ২৪৩ দিনের বৈভবকে।

বৈভবের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরের তাজপুর বলে একটি এলাকায়। চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট শেখা শুরু তার। সাড়ে সাত বছর বয়সে বৈভবের বাবা সঞ্জীব তাকে নিয়ে যান পটনার এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানেই কোচ সৌরভ কুমার প্রথম দেখেন বৈভবকে। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত কম বয়সে তার ব্যাটিং দেখে। নেটে নামার জন্য ছটফট করত বৈভব। আর সেখানে তার বয়সি বোলারেরা প্রায় পাত্তাই পেত না। বড়দের সঙ্গে খেলানো হত বৈভবকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সৌরভ বললেন, “আমরা জানতাম নিলামে রাজস্থান ওর জন্য ঝাঁপাবে। প্রায় সব দলই বৈভবের খেলার ভিডিয়ো চেয়েছিল। দিল্লি আর রাজস্থান ট্রায়ালেও ডাকে। ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের ট্রায়ালে গিয়েছিল বৈভব। পাঁচ দিনের মধ্যে ওরাই কিনে নিল ওকে।”

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। বাবা কৃষক। একটি দোকানও আছে। জমি বিক্রি করে ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ জুগিয়েছেন সঞ্জীব। সমস্তিপুর থেকে ভোর চারটের সময় বেরোতে হয়। পটনা পৌঁছতে ৭.৩০ বেজে যায়। সেখানে কোচ মণীশ ওঝার কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বৈভব। কাকভোরে খাবার বানিয়ে দেন বৈভবের মা। মণীশ বললেন, “সমস্তিপুরে বৈভবের বাড়ি থেকে পটনায় আমার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রতি দিন অনুশীলন করতে আসা সম্ভব ছিল না। এক দিন অন্তর আসত ও। তবে যে দিন আসত অন্তত ৫০০ বল খেলত।”

নিজের সঙ্গে কিছু বোলার নিয়ে আসত বৈভব। বিভিন্ন শট খেলার অনুশীলন চলত সারা দিন ধরে। খেলার এবং শেখার ইচ্ছা এতই প্রবল ছিল যে, সময়ের হিসাব থাকত না। মণীশ বললেন, “আমার কাছে আসা ছেলেদের আমি সাধারণত ১০০-২০০ বল খেলাই। বৈভব খেলত ৫০০ বল। এই বয়সটা ক্রিকেটারদের শেখার সময়। ও এত খেলে বলেই দ্রুত শিখতে পারে। এক জন ক্রিকেটার যত বল খেলবে, তত শিখবে। তবে বেশি বল খেললেই সকলে যে শিখবে সেটা নয়। নেওয়ার ক্ষমতা এবং ইচ্ছেটাও প্রয়োজন। সেটা বৈভবের প্রবল।”

নিলামের আগেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিহারের কিশোর ব্যাটারের নাম। নিলামের তালিকায় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে ছিল বৈভবই। তার ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সঙ্গে টাকার যুদ্ধে নামেন রাজস্থান রয়্যালস কর্তৃপক্ষ। রাজস্থানকে নিলামে নেতৃত্ব দেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজে। দিল্লির হাতে সে সময় ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১৮ জন ক্রিকেটারকে নেওয়া ছিল তাদের। অন্য দিকে, রাজস্থানের হাতে ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাদের কেনা হয়েছিল ১৬ জন ক্রিকেটার। তুলনায় বেশি টাকা হাতে থাকায় সম্ভবত ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে এগিয়ে যান রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাম দিতে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় দিল্লি। তাতেই নতুন ইতিহাস তৈরি হল আইপিএলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here