চট্টগ্রামে ইসকন সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ

0
15

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রাম আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার সময় ইসকন সমর্থকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আশপাশের যানবাহন ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। এতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পর পরে তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করে ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ) বাংলাদেশ।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

তবে জামিন নামঞ্জুরের পর তাকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলেও কয়েকশ ইসকন সমর্থক ঘিরে রাখেন প্রিজন ভ্যানটি। তারা প্রিজন ভ্যান ঘিরে নানা ধরনের স্লোগানও দেন। প্রিজন ভ্যাট আটকে রাখা ইসকন সমর্থকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে পরে তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

তার আগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে সিএমপি কোতোয়ালি থানায় রাখা হয়। চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে তোলা হয়।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) এবং হৃদয় দাস (২৫)।

একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরই দু’জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন।

ওইদিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ নয়জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দু’টি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে।

সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আরো কয়েকজনকে গত জুলাই মাসে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

চট্টগ্রামের হাজারি গলির ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ‘ইসকন বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এ কথা জানান।

সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ও সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

বহিষ্কৃতদের মাধ্যমে সংঘটিত কোনো কার্যক্রম ইসকন জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে সেদিন তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সহিংসতার মতো বেআইনি কাজের সাথে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here