দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে: জিইডি

0
12
দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে: জিইডি
দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে: জিইডি

দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে— বিনিয়োগে ভাটা, ঋণ সংকোচন ও উচ্চ সুদের হার। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে অর্থনীতিতে ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক ইকনোমিক আপডেট প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার এটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে, একই সঙ্গে আমানত প্রবৃদ্ধিও পুনরুদ্ধার হয়েছে। যা সরকারের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগের ফল।

জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার হ্রাস, ই-মনি ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সরকারি অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের মতো পদক্ষেপ আমানত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। শক্তিশালী প্রবাসী আয়ও এ প্রবণতাকে সহায়তা করেছে। আগামী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে চাঙ্গা করে তুলবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশে পৌঁছায়, যা আগস্টে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত উভয় খাতেই একই ধরনের সামান্য বৃদ্ধি দেখা যায়। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৫৬ শতাংশে স্থির রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তেলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়াই মূল্যস্ফীতির দীর্ঘস্থায়ী চাপের প্রধান কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চাল প্রধান চালিকা শক্তি হলেও এর অবদান আগস্টের ৪৮.৩৭ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। আলু ও পেঁয়াজের দাম কমায় সাধারণ ভোক্তা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মোটা, মাঝারি ও সরু সব ধরনের চালের দাম প্রায় এক শতাংশ কমেছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ৮ অক্টোবর ভারতের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন চাল এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির অনুমোদন দেয়। নভেম্বরে আরও ৪ লাখ টন খাদ্যশস্য আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই অর্থবছরে এ পর্যন্ত সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি খাদ্যশস্য মজুত ১৫ লাখ ৫ হাজার টন।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মার্চ মাসের ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪ বিলিয়ন ডলার। বিএমপি ৬ মানদণ্ডে এই সময়ে রিজার্ভ ২০.৪ বিলিয়ন থেকে ২৬.৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

কয়েক মাস ৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকার পর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় কমে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যা আগস্টে ছিল ৩.৯২ বিলিয়ন ও জুলাইয়ে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। মৌসুমি প্রভাব এবং তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি হ্রাসই এর প্রধান কারণ। তবে পাটজাত পণ্য, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় বেশি, যা খাতটির স্থিতিস্থাপকতা নির্দেশ করে।

২০২৫ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরে টাকার বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল-প্রতি মার্কিন ডলারে ১২১-১২২ টাকা। একই সময়ে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) সামান্য বেড়ে ১২১.২ থেকে ১২৭.২ হয়েছে। যা উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতার ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন নির্দেশ করে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট আমানত বছরে ১০.০১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্রড মানি (এম২) ৭.৭৮ শতাংশে সম্প্রসারিত হয়েছে। রাজস্ব আদায়ও গতি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ভ্যাট আদায় বেড়েছে ৩৩.৮ শতাংশ, আয়কর ২৪ শতাংশ। তবে শুল্ক রাজস্ব ৪.৫ শতাংশ কমেছে।

প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআর ১২টি নতুন কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউস স্থাপন এবং ৩ হাজার ৬০০ নতুন পদ সৃজন করেছে। যার মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ ও নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here