ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

0
10
ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট কমাতে এবং লেনদেন স্বাভাবিক করতেই এই সহায়তা দেওয়া হয়।

ওই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। এর বিপরীতে সুদের হার ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে মোটা অঙ্কের টাকা ধার দিয়েছে।

গত জুন মাসে বিশেষ তারল্য সহায়তা বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেওয়া বিশেষ তারল্য সহায়তার মধ্যে গত জুলাইয়ে দেওয়া সহায়তাই সর্বোচ্চ। সোমবার (১৭ আগস্ট) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে সৃষ্ট ক্ষত আরও প্রকট হচ্ছে। লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এখন ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান খারাপ হচ্ছে। এর বিপরীতে তারল্য সংকট বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো যেমন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তেমনই গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণও বিতরণ করতে পারছে না। আগে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হওয়ায় এবং নতুন ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উপকরণ ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয়। এক দিন থেকে এক বছর মেয়াদি এসব সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি অনেক সুবিধার অর্থ ব্যাংকগুলো পরিশোধ করে দিয়েছে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সবচেয়ে বেশি তারল্য সুবিধা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোপোর মাধ্যমে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আগে কেনা ট্রেজারি বিল রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জুনে দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি এবং মে মাসে দেওয়া হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিমাসে এক লাখ টাকার কম করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হয়েছে কলমানি মার্কেট থেকে। এ মার্কেট থেকে জুলাইয়ে ব্যাংকগুলো এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে মোট সহায়তা নিয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে নিয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে নিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নেওয়া হয়েছে। বাকি সময়ে ধারের পরিমাণ প্রতিমাসে ১ লাখ কোটি টাকার কম ছিল।

আন্তঃব্যাংক রেপোর মাধ্যমেও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। কিন্তু এ খাতে লেনদেন কম হচ্ছে। গত জুলাইয়ে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। জুনে আন্তঃব্যাংক রেপোতে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে এ খাতে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে তারল্য ব্যবস্থায় সমতা আনার জন্য ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জোর দিক। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আস্থাহীনতা (বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি সবল ব্যাংকগুলোর) এমনভাবে বেড়েছে, এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতে দেওয়া ধারও খেলাপি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংক ব্যাংক এশিয়া থেকে ধার নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে মামলাও হয়েছে। আরও কিছু ব্যাংকের ধারদেনা পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here