এবার বিশ্ববাজারে রুপার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ

0
8

বিশ্ববাজারে রুপার দাম নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে মার্কিন শ্রমবাজারের দুর্বল তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সোনার দামেও উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ভবিষ্যতে সুদহার আরও কমাতে পারে এমন প্রত্যাশা মূল্যবান ধাতুর বাজারকে আরও উজ্জীবিত করছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) স্পট সিলভারের দাম একদিনে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্স ৬৫ দশমিক ৯৪ ডলারে পৌঁছেছে। লেনদেন শুরুতে রুপার দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৫২ ডলার পর্যন্ত ওঠে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরবরাহ সংকট, শিল্প খাতে শক্তিশালী চাহিদা এবং জল্পনামূলক বিনিয়োগ মিলিতভাবে রুপার দামে উল্লম্ফনের কারণ হয়েছে। স্বাধীন বিশ্লেষক রস নরম্যান বলেন, “রুপা এখন বিকল্প বিনিয়োগের অন্যতম আলোচিত সম্পদ। সবুজ জ্বালানি কর্মসূচির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকায় ভবিষ্যৎ চাহিদা অত্যন্ত ইতিবাচক। সরবরাহ সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়ছে।”

মার্কিন শ্রমবাজারের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, খামার বহির্ভূত খাতে নতুন ৬৪ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হলেও, নভেম্বর মাসে দেশটির বেকারত্বের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদরা এটিকে শ্রমবাজারে ধীরগতির স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

এদিকে, বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের দিকে নজর দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ভোক্তা মূল্য সূচক এবং শুক্রবার ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়ের তথ্য প্রকাশিত হবে, যা ভবিষ্যৎ সুদহার সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবে।

গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরের তৃতীয় ও শেষ দফায় কোয়ার্টার-পয়েন্ট সুদহার কমানোর ঘোষণা দেয়। ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তব্য বাজারে তুলনামূলকভাবে নমনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ২০২৬ সালে দুটি ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমানোর সম্ভাবনা হিসাব করছেন। সাধারণত কম সুদের পরিবেশে সোনাসহ অ-ফলনশীল সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ এবং দেশটি থেকে অনুমোদিত তেল ট্যাঙ্কার বের হওয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। প্ল্যাটিনামের দাম ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ১,৯২০ দশমিক ৭১ ডলারে পৌঁছেছে, যা ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্যালাডিয়ামের দাম ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ১,৬৩৪ দশমিক ২৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দুই মাসের সর্বোচ্চ।

রস নরম্যান বলেন, “সাদা ধাতুর পুরো খাতই সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩৫ সালের দহন ইঞ্জিন নিষিদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ায় প্ল্যাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”

এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে রুপা, সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু এখন আরও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হিসাবে দেখা দিচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here