নির্বাচন কমিশনের দাবিকৃত অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ছাড় করা হবে

0
12

নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতির কাজ খুব ভালোভাবে করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট যুক্ত হওয়ায় বাড়তি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অর্থ নির্বাচন কমিশনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছাড় করা হবে।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনের জন্য দেশে উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘মনে হয় প্রস্তুতিমূলক কাজ নির্বাচন কমিশন খুব ভালোভাবে করেছে। আপনারা দেখবেন ওরা সময়মতো ভোটার লিস্ট সংশোধন করেছে। এখন তারা সিডিউল ঘোষণা করেছে। এখন দরকার যে ইমপ্লিমেন্ট করার, যেসব জায়গায় ওরা করবে সেখানে সিচুয়েশন বুঝে সেনসিটিভ জায়গাগুলোতে বেশি করা হবে। যেগুলো লেস সেনসিটিভ সেগুলো তো অলরেডি ওরা জানে, কোন কোন জায়গা মোর সেনসিটিভ সেগুলো প্রিপারেশন নিচ্ছে।’
নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত কোনো চাহিদাপত্র দেয়নি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যখনই চাহিদাপত্র আসবে আমি বুঝতে পারব, আমরা তাড়াতাড়ি প্রসেস করব। আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধরে- বেঁধে বলব না এত পাঠান। কারণ ওদের যা যা লাগবে ওদের পুরা লজিস্টিক, তারপর আছে ওদের সাপোর্টিং, অনেক লোকজন কাজ করবে নির্বাচনের দিন। এছাড়া গণভোটের দিন বহু লোক থাকবে। তাদের জন্য খরচ ওরা দেবে। ওটার ব্যাপারে আমাদের কোনো রিজারভেশন নাই। যখন দেবে তখন আমরা যাচাই করব।

এলএনজি আমদানি ব্যয় ৪২০ কোটি টাকা
এদিকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এ বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪২০ কোটি ৯ লাখ ৬৯ হাজার ২২৫ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০২৫-এর বিধি-১০৫(৩) (ক)-অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো (৯-১০ জানুয়ারি ২০২৬ সময়ের জন্য ২য়) এলএনজি কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।

৮০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবিক অ্যাগ্রো নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে এই সার আনতে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৪০ টাকা। সার কেনার পাশাপাশি নওগাঁ ও বগুড়া জেলায় একটি করে বাজার গুদাম নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৪১৩.৪৬ মার্কিন ডলার হিসেবে ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২০৩ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৫২০ টাকা।
এদিকে সোমবারের বৈঠকে ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ জেলায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব নিয়ে আসে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ জেলায় একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৪টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান এম/এস ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, নারায়ণগঞ্জ-এর নিকট থেকে ৫৪ কোটি ৭০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৫ টাকায় প্রকল্পের আওতায় একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া জেলায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি বাফার গুদাম নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘রাবনাবাদ সেতু’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত
পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের অধীনে রাবনাবাদ নদীর ওপর ৮৮২ দশমিক ৮১ মিটার দীর্ঘ ‘রাবনাবাদ সেতু’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৬৪ কোটি ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৫৮ টাকা। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সেতু নির্মাণের পূর্ত কাজের ব্যয় সোমবার অনুমোন দেওয়া হয়েছে। লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া জেলা মহাসড়কের রাবনাবাদ নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের পূর্ত কাজ কেনার জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে।
দুটি দর প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, এম/এস জন্মভূমি নির্মাতা এবং ওহিদুজ্জামান চৌধুরীর কাছ থেকে ১৬৪ কোটি ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৫৮ টাকায় প্রকল্পের বর্ণিত প্যাকেজের পূর্ত কাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউপি-০২-এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৫৬ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ১২৯ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ প্যাকেজের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৪টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এমএএইচ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এবং রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কাছ থেকে ১৫৬ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার ১২৯ টাকায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পৃথক একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘কুমিল্লা সড়ক বিভাগাধীন ৪টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-০৩-এর পূর্ত কাজের ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ৯০২ টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here