অবসর যত কাছে আসে, ততই মানুষ চিন্তিত হয় “আমার সঞ্চয় কি যথেষ্ট?”। বিশেষ করে পঞ্চাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকলে এই প্রশ্ন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা ও পরিবারের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক।
এক সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী অধিকাংশ মানুষ এখনও অবসর জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চয় করতে পারেননি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬৫ বছর বয়সে নিরাপদভাবে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করলে পঞ্চাশে আপনার মাসিক আয়ের অন্তত ৫–৬ বছরের সমপরিমাণ সঞ্চয় থাকা উচিত।
তবে, এটি সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। যেসব পরিবার তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয় করে, তাদের সঞ্চয় আরও বেশি হতে হবে। অর্থনৈতিক পরিকল্পকরা বলেন, “আপনার জীবনধারা, পরিবারের দায়িত্ব, স্বাস্থ্য ও অবসরকালীন সময়ের ব্যয়—এসব হিসাব মিলিয়ে সঞ্চয় নির্ধারণ করতে হবে।”
কিভাবে যাচাই করবেন আপনার সঞ্চয় যথেষ্ট কি না?
প্রথমে নির্ধারণ করুন অবসরে বছরে কত টাকা ব্যয় হবে। এরপর সেটি গুণ করে দেখুন কত বছর ধরে সেই ব্যয় চলবে। মুদ্রাস্ফীতি, বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসার খরচও মাথায় রাখুন। এইভাবে সহজেই হিসাব করা সম্ভব, প্রতি বছর কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে এবং বিনিয়োগ কিভাবে বাড়াতে হবে।
যদি পিছিয়ে থাকেন, এই ৩টি পদক্ষেপ নিন
১. সরকারি পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা কাজে লাগান
সরকারি বা বেসরকারি চাকরির প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশন সুবিধা অবহেলা করবেন না। সরকারি চাকরিতে সাধারণত সঞ্চয়ের সঙ্গে মাসিক অবসরভাতা যুক্ত থাকে। বেসরকারি ক্ষেত্রে ৫০–৬০ বছর বয়সের আগে অতিরিক্ত অবদান রাখার সুযোগ থাকলে সেটি কাজে লাগান।
২. বাড়তি সঞ্চয়ের সুযোগ ব্যবহার করুন
পঞ্চাশের পর অবসর পরিকল্পনায় ‘ক্যাচ-আপ’ সুবিধা নেওয়া সম্ভব। যেমন: নির্দিষ্ট ব্যাংক বা বিনিয়োগ পরিকল্পনায় মাসিক ১০,০০০–২০,০০০ টাকা অতিরিক্ত জমা রাখলে ভবিষ্যতে লাভজনক রিটার্ন পাওয়া যায়। এটি শুধু সঞ্চয় নয়, কর সুবিধাও দিতে পারে।
৩. জীবনযাত্রা সামঞ্জস্য করুন
যদি সঞ্চয়ের ঘাটতি থাকে, জীবনযাত্রার মান কিছুটা সরল করা প্রয়োজন। কম বিলাসিতা, ঋণ পরিশোধ, কম ভাড়া বা সাশ্রয়ী থাকার মাধ্যমে সহজভাবে অবসর কাটানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সব স্বপ্নের জীবন হবে না, তবে পরিকল্পনা ও সঞ্চয় থাকলে নিরাপদভাবে অবসর কাটানো যায়।”
সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে, অবসর নেওয়ার পরও আংশিক কাজ চালিয়ে যাওয়া একটি বাস্তব উপায় হতে পারে।
অবসর মানে পাহাড়সম লক্ষ্য নয়। এটি একটি দীর্ঘযাত্রা, যেখানে নিজেকে বুঝে, পরিকল্পনা অনুযায়ী চলা জরুরি। পঞ্চাশে যদি মনে হয় সঞ্চয় কম, দুশ্চিন্তা নেই। এখনই শুরু করুন। ছোট ছোট পদক্ষেপে গড়ে তোলা সম্ভব একটি নিরাপদ আর্থিক ভবিষ্যৎ।




