২০২৬ সালে আর্থিক সচ্ছলতা চাই? শুরু করুন এই সহজ বাজেট ও বিনিয়োগ কৌশল দিয়ে

0
4

২০২৬ সালে ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিক সফলতা ও সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে শুধু আয় বাড়ালেই চলবে না—প্রয়োজন সুপরিকল্পিত বাজেট, সঠিক বিনিয়োগ কৌশল এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা। নতুন বছরের শুরুতেই যদি সঠিক আর্থিক রূপরেখা তৈরি করা যায়, তবে সারা বছর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, সুদের হারের ওঠানামা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালে ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি সতর্কতা প্রয়োজন।

 

আয়-ব্যয়ের খাতা: আর্থিক সাফল্যের প্রথম ধাপ

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক আঞ্চলিক প্রধান ও ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ফকির আকতারুল আলম বলেন, আর্থিক সচ্ছলতার জন্য সবার আগে প্রয়োজন একটি নিখুঁত আয়-ব্যয়ের হিসাব। মাসিক বাজেট তৈরি করে নিয়মিত খরচ ট্র্যাক করলে কোথায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হচ্ছে—তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা অপ্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন ফি বন্ধ করলে সঞ্চয় বাড়ানো সম্ভব।

জরুরি তহবিল ছাড়া নয়

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইমার্জেন্সি ফান্ড গঠন এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত তিন থেকে ছয় মাসের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ নগদ বা লিকুইড ফান্ডে রাখা উচিত। এতে চাকরি হারানো, অসুস্থতা বা হঠাৎ বড় কোনো বিপদে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

ঋণের বোঝা কমানোই বুদ্ধিমানের কাজ

উচ্চ সুদের ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের দেনা অনেক সময় সঞ্চয়কে গ্রাস করে ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত ঋণের হার বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব ঋণ পরিশোধ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিনিয়োগ ও কর পরিকল্পনায় সচেতনতা

দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য—যেমন বাড়ি কেনা, সন্তানের শিক্ষা বা অবসরকালীন জীবন—এসবের জন্য আলাদা আলাদা তহবিল গঠন করা জরুরি। স্থায়ী আমানত, সঞ্চয়পত্র কিংবা এনবিআর অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াতের পাশাপাশি বাড়তি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

মূল্যস্ফীতির কথা মাথায় রেখে বাজেট

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৬ সালে মাসিক বাজেটে অন্তত ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়তি বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা অত্যন্ত জরুরি

হঠাৎ বড় অঙ্কের চিকিৎসা ব্যয় অনেক সময় বছরের সঞ্চয় শেষ করে দেয়। তাই স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা করে রাখা মূল সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখার কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডিজিটাল টুল ব্যবহারে সহজ অর্থ ব্যবস্থাপনা

ব্যাংক অ্যাপ, বিকাশ, নগদ বা ইউনেটের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত বিল পরিশোধ ও খরচ পর্যবেক্ষণ করলে সময় বাঁচে এবং ভুল হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

মাসে অন্তত একদিন আর্থিক রিভিউ

সবশেষে ফকির আকতারুল আলমের পরামর্শ—প্রতি মাসে অন্তত একদিন নিজের আর্থিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ রিভিউ করা উচিত। বাজার পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলেই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here