সংগীত নিয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রনেতারা যদি সংগীতকে না বোঝেন কিংবা গানকে গুরুত্ব না দেন, তাহলে শিল্পীদের তেমন কিছুই করার থাকে না। জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায় না। গত মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে শিল্পীদের কখনওই যথাযথ কদর করা হয়নি উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। শিল্পীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিয়েও ক্ষোভের কথা জানান সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘অনেক গুণী শিল্পী স্বীকৃতি পাননি। রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার তারা। কাউকে কাউকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। জীবিত থাকতে যদি সম্মাননা না পাওয়া যায়, মরে গিয়ে তো সম্মাননা পেয়ে লাভ নেই। এ বিষয়টি রাষ্ট্রের গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।’ সংগীতাঙ্গনের অবস্থা নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে শিল্পী বা তাদের শিল্পকর্মকে কখনওই যথাযথভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়নি।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি ভারতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, লতা মঙ্গেশকরের প্রতি সম্মান জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রণাম করেছেন। সে দেশে শিল্পীদের প্রতি সম্মান রাষ্ট্রীয়ভাবেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বাংলাদেশে তো সে রকম দৃশ্য আমরা পাইনি। বড় বড় শিল্পী চলে গেলেন- সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোরসহ অনেকেই। অথচ তাদের গান আর্কাইভ করার উদ্যোগও দেখা যায়নি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ফরিদা পারভীনের মতো শিল্পী নিভৃতে চলে গেলেন। তারা যে ধরনের শিল্প রেখে গেছেন, সেগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হতো। দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের এখানে তা হয়নি।’
এর আগে বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর পর শিল্পীদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী কনকচাঁপা। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যখন একজন শিল্পী মারা যায়, তখন পাপ-পুণ্য, বেহেশত-দোজখ নিয়ে এত কথা বলে যে, সেই কমেন্টগুলো দেখলে আমরা খুব ভীত হয়ে যাই। আমাদের খুব খারাপ লাগে।’ তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফন করার আগেই তিনি দোজখের কয় নম্বরে যাবেন, সেগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করে মানুষ।’
সাবিনা ইয়াসমিন শিল্পীদের রয়্যালটি ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই গুণী শিল্পীর ভাষায়, বহু দেশে গানের রয়্যালটি শিল্পী ও তাদের পরিবারকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়। আমাদের এখানে সে ব্যবস্থা নেই। রয়্যালটি পেলে শিল্পীরা আর্থিকভাবে ভালো থাকতেন।