আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে রোববার রাতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৮০০ জনে। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত আড়াই হাজার মানুষ।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে তাদের পুরো গ্রামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। বৃদ্ধরাও চাপা পড়ে আছেন। তরুণরাও চাপা পড়ে আছে।”
আবেগ ধরে রাখতে না পেরে তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখানে সাহায্য প্রয়োজন। কেউ আসুক, আমাদের সঙ্গে যোগ দিক। আমরা যারা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে, তাদের টেনে বের করতে চাই। কিন্তু এখানে কেউ নেই—মৃতদেহগুলো সরানোর মতোও কেউ নেই।”
দুর্গমতা ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনো নিরূপণ করা কঠিন, জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন আফগানিস্তানের জাতীয় পরিচালক থামিন্ড্রি ডি সিলভা।
আল জাজিরাকে কাবুল থেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মাজার উপত্যকা অঞ্চলটি মনে হচ্ছে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, এবং সেখানে একটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।”
তিনি আরও জানান, “এটি আফগানিস্তানের অন্যতম দুর্গম এবং দরিদ্র একটি অঞ্চল। এখানে অবকাঠামো নেই বললেই চলে, রাস্তা প্রায় নেই, নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্কুল।”
ডি সিলভা বলেন, “এই অঞ্চলের ঘরবাড়িগুলো মূলত কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি, কোনো সুরক্ষা বা শক্তিশালী নির্মাণ নেই। এমন ভঙ্গুর অবকাঠামোয় ভূমিকম্পে ভবনগুলো খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। ফলে বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যেতে পারে।”
তিনি সতর্ক করে যোগ করেন, “এই পরিস্থিতিতে সময়ই সবচেয়ে বড় বিষয়।”
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের কার্যালয় এক পোস্টে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে তাদের দলগুলো জরুরি সহায়তা প্রদান করছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া বার্তায় বলা হয়, “আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে শত শত প্রাণহানি ও বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ গভীরভাবে শোকাহত।”
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এক বার্তায় বলেছেন, “আজকের ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত আফগান জনগণের সঙ্গে আমি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।” তিনি আরও বলেন, “নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”