গাজায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা

0
17
গাজায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা
গাজায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা

ইসরায়েল গাজা উপত্যকা ও দক্ষিণ লেবাননে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। এতে আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
দক্ষিণ লেবাননের টুরা গ্রামে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে লেবাননের সেনা ও স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা যুদ্ধবিরতির বড় ধরনের লঙ্ঘন এবং নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
গাজায় প্রতিদিন মাত্র ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষের জন্য একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে একাধিক মানবিক সংস্থা। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল কার্যত এনজিওগুলোর ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে। এতে ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন ও গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ৮৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত ও প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর থেকে হামাস ২০ জন ইসরায়েলিকে জীবিত মুক্তি দিয়েছে এবং আরও ২২ জনের মরদেহ হস্তান্তর করেছে।
গাজায় সাহায্যপণ্য সরবরাহে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ
ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা এখন ক্ষুধায় জর্জরিত। সম্প্রতি খাদ্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হলেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ পৌঁছাতে হবে কেননা এখন যে হারে সরবরাহ হচ্ছে তা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। খবর আলজাজিরার।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো ১০ অক্টোবরের পর থেকে ৩৭ হাজার মেট্রিক টন সাহায্যপণ্য সংগ্রহ করেছে যার মধ্যে বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য। তবে এই পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে কম এবং জরুরি ভিত্তিতে আরও পণ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সেবা সংস্থা ওসিএইচএর প্রতিবেদন তুলে ধরে ফারহান হক বলেন, ‘মানবিক সাহায্য সরবরাহে কিছুটা উন্নতি হলেও যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি বিধিনিষেধগুলো থেকে যাওয়ায় জনগণের বিশাল চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ইসরায়েলের সমালোচনা করে ফারহান হক জানান, আল-কারারা (কিসুফিম) এবং কারেম আবু সালেম (কেরেম সালোম) ক্রসিং দিয়ে এখনো সীমিত আকারে মানবিক সাহায্যপণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েল থেকে উত্তর গাজায় অথবা মিশর থেকে দক্ষিণ গাজায় সরাসরি প্রবেশে কোনো পথ এখন খোলা নেই এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
এ সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তারা গাজায় ১০ লাখ মানুষের জন্য খাবারের পার্সেল বিতরণ করেছে। তবে সেখানকার সব মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সাহায্যের এই পরিমাণ নিতান্তই কম।
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গাজায় প্রবেশের জন্য সব সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, ভূখণ্ডটির উত্তরের ক্রসিং কেন বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল তার কোনো কারণ জানা যায়নি।
ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে গাজার ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এখনো খাবার, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি পণ্যের সঙ্কটে ভুগছে। বেশিরভাগ মানুষেরই থাকার মতো কোনো ঘর নেই। গত দুই বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত বোমাবর্ষণে গাজার বসতভিটাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
দোয়া-মোনাজাত ও তাকবির ধ্বনিতে মুখর ফিলিস্তিনের মসজিদগুলো
যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ধ্বংসস্তূপ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদে দাঁড়িয়ে চতুর্থ জুমার নামাজ আদায় করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
৯ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর এ নিয়ে চতুর্থ জুমা পালিত হলো। মধ্য গাজার নুসাইরাত, দেইর আল-বালাহ, উত্তর গাজার শহরাঞ্চল এবং দক্ষিণের খান ইউনুস থেকে আল-জাজিরা মুবাশিরের ক্যামেরা গাজার জুমা আদায়ের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে। প্রত্যেক মসজিদেই মুসল্লিরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং দোয়ায় আবেগভরে চোখের পানি ফেলেছেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৮৩৫টি মসজিদ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। আরও ১৮০টির বেশি মসজিদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে গাজার কোনো এলাকা, এমনকি মসজিদ ও উপাসনালয়ও রক্ষা পায়নি।
দুই বছরব্যাপী চালানো হত্যাযজ্ঞে ধ্বংসস্তুপে পরিণত গাজা এখনো শোকার্ত, তবে শুক্রবারের জুমায় সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই তাকবির ধ্বনিতে নতুন আশা দেখছেন গাজাবাসী।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল তুরস্ক
গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকারের ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা জানিয়েছে তুরস্ক।
যে ৩৭ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি হয়েছে তাদের মধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির, সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল ইআয়াল জামিরও আছে। ইস্তাম্বুলের কৌঁসুলির কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
তবে পরোয়ানাভুক্ত সবার নাম প্রকাশ করেনি তারা। তুরস্ক এ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে’ গাজায় ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ চালানোর অভিযোগ এনেছে।
মার্চে গাজা ভূখণ্ডে ‘তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতালে’ বোমাবর্ষণসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি, চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি, অবরোধ ও গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডকে অভিযগের পক্ষে যুক্তি হিসেবে হাজির করেছে আঙ্কারা।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) যে মামলা করেছে তুরস্ক গত বছর তাতেও শামিল হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here