গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, শতাধিক নিহত

0
7
গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, শতাধিক নিহত
গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা, শতাধিক নিহত

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা চালিয়ে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে গাজার সিভিল ডিফেন্স মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার কেন্দ্র, উত্তারাঞ্চল ও রাফার দক্ষিণ অংশে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাসাল বলেছেন, ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে দখলদার বাহিনী গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রোমহর্ষক গণহত্যামূলক হামলা চালিয়েছে। তারা শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৩৫ শিশু এবং বেশ কয়েকজন নারী ও বৃদ্ধ রয়েছেন। তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো রেকর্ড করা হচ্ছে।
যেসব হাসপাতালে নিহত ও আহতদের নেওয়া হয়েছে, এ রকম পাঁচটি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি এই সংখ্যা নিশ্চিত হয়েছে।
ইসরায়েল গাজা সিটি, খান ইউনিস ও মধ্যাঞ্চলীয় শরণার্থী শিবির,ঘরবাড়ি, তাঁবু ও হাসপাতালে বিমান হামলা চালিয়েছে। চিকিৎসাকর্মীরা সতর্ক করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় আছেন। কেউ কেউ আবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন। ১২ ঘণ্টা বোমা হামলা চালানোর পরও ইসরায়েল দাবি করছে তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে দ্রুতই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সাথে তারা ত্রাণ সরবরাহের জন্য মানবিক করিডোর চালু করার আহ্বানও জানিয়েছে। মেডিকেল দল পাঠানোর পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনে কাজ শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ রাফাহ এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় এক ইসরায়েলি সেনা আহত হওয়ার পর জোরালো হামলা চালানোর নির্দেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এসব হামলাকে এই উপত্যকায় সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগ এনে বলেছে, নিখোঁজ এক ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করার পরিকল্পনা তারা আপাতত স্থগিত রাখবে।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি সতর্ক করে আরও বলেছে, ইসরায়েলের নতুন হামলা জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে শুরু করা তল্লাশি ও খনন কার্যক্রম ব্যাহত করবে। এ কারণে গাজায় থাকা আরও ১৩ জিম্মির মরদেহ উদ্ধারে বিলম্ব হবে।
ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, উভয় পক্ষের লঙ্ঘনের অভিযোগ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে।
‘ছোটখাটো সংঘর্ষ হতেই পারে,’ সাংবাদিকদের বলেন জেডি ভ্যান্স। ‘আমরা জানি, হামাস বা গাজার ভেতরে অন্য কেউ একজন ইসরায়েলি সেনাকে আক্রমণ করেছে। ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া আশা করাই যায়। তবু প্রেসিডেন্টের (ডোনাল্ড ট্রাম্প) শান্তিচুক্তি টিকে থাকবে বলে আমি মনে করি।’
হামাস অবশ্য রাফাহর ওই হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
গাজার চিকিৎসা সূত্রগুলো সাংবাদিকদের জানায়, গত মঙ্গলবারের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তর গাজা সিটির সাবরা এলাকার একটি আবাসিক ভবনের চারজন ও দক্ষিণের খান ইউনিসের পাঁচজন ছিলেন।
আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানান, আল–শিফা হাসপাতালের পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। গাজার আকাশজুড়ে ইসরায়েলি ড্রোনের তৎপরতা ছিল ব্যাপক।
হানি মাহমুদ আরও বলেন, ‘ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বড় বিস্ফোরণ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আমরা এখান থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে ছিলাম। তবু শব্দ শোনা যাচ্ছিল। হামলায় হাসপাতালের রোগী ও কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’
আর হামলার পর পার্শ্ববর্তী সাবরা এলাকায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের উদ্ধারে সারা রাত চলেছে তল্লাশি ও খোঁড়াখুঁড়ি। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করেন।
চিকিৎসকেরা জানান, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ইব্রাহিম আবু রিশ বলেন, ‘এটি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা হতাহত কয়েকজনকে পেয়েছি। যতজনকে সম্ভব উদ্ধার করার জন্য আমরা হাসপাতাল ভবন তল্লাশি করছি।’
হামলার আগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয়, সেনাবাহিনীকে গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা চালানোর’ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হামলার সুনির্দিষ্ট কারণ জানায়নি এ দপ্তর।
তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ পরে এক বিবৃতিতে বলেন, হামাস রাফাহয় সেনাদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ী এবং এর ‘চড়া মাশুল’ দিতে হবে।
দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, ইসরায়েল হামলার আগে ওয়াশিংটনকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ উপত্যকায় অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ত্রাণ সহায়তাও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হয়েছে।
হামাস অবিলম্বে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে তারা বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে শারম আল–শেখে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন।’
হামাস আরও জানায়, তারা চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছে এবং ইসরায়েলের মিথ্যা অভিযোগ বন্ধ করা উচিত।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল–হিন্দি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। ইসরায়েলকে বুঝতে হবে। তারা আমাদের অসত্যভাবে অভিযুক্ত করা বন্ধ করুক।’ জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে তাদের সংগঠন বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
সুহাইল বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি, জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য। অবশিষ্ট জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে যে দেরি হচ্ছে, তার পুরো দায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর।’
গত মঙ্গলবার কাসাম ব্রিগেড জানায়, তারা দুই ইসরায়েলি জিম্মি- আমিরাম কুপার ও সাহার বারুচের মরদেহ উদ্ধার করেছে। একই সঙ্গে তারা এদিন মরদেহ হস্তান্তরের পূর্বনির্ধারিত প্রক্রিয়া স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here