গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী তিনটি প্রধান ফ্রন্টে তাদের স্থল অভিযান ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় সূত্র ও সরকারি বিবৃতির ভিত্তিতে জানা গেছে যে সেনাবাহিনী নেটজারিম অক্ষ (মধ্য গাজা), রাফাহ শাবুরা শরণার্থী শিবির (দক্ষিণ গাজা) এবং বেইত লাহিয়া (উত্তর গাজা) অঞ্চলে আক্রমণ চালাচ্ছে।
নেটজারিম অক্ষ : গাজাকে বিভক্ত করার কৌশল
ইসরাইলি বাহিনী নেটজারিম অক্ষে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। গাজার পূর্ব সীমান্ত থেকে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের দিকে অগ্রসর হয়ে তারা গাজার প্রধান উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়ক কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এরপর পশ্চিম দিকে হামলা চালিয়ে উপকূলীয় রশিদ স্ট্রিটে অতিক্রমের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর ফলে গাজা কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বরের গোড়ার দিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই নেটজারিম অক্ষ তৈরি করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল গাজা শহর ও উত্তরের অঞ্চলকে মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করা। এটি গাজার পূর্ব সীমান্ত থেকে পশ্চিম উপকূলরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই অক্ষ থেকে সরে আসে।
রাফাহ অক্ষ : শরণার্থী শিবিরে ধ্বংসযজ্ঞ
একই সময়ে মধ্য গাজায় স্থল আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইলি বাহিনী ফিলাডেলফিয়া অক্ষ বরাবর সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। তারা রাফাহ শহরে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে শাবুরা শরণার্থী শিবিরে প্রবেশের দাবি করেছে। অভিযানের সময় বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
ফিলাডেলফিয়া অক্ষটি দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের এক-তৃতীয়াংশ এলাকাকে ঘিরে রেখেছে। যদিও শাবুরা এলাকায় সেনাবাহিনীর গতিবিধি তুলনামূলকভাবে সীমিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তবুও সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।
বেইত লাহিয়া অক্ষ : উত্তর গাজায় সহিংসতা
বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার উপকূলরেখা বরাবর তৃতীয় স্থল অভিযান শুরু করে। এর সাথে গাজার বিভিন্ন স্থানে তীব্র বিমান হামলা চালানো হয়।
শুক্রবার সকালে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বেইত লাহিয়ায় প্রবেশ করে এবং সেখানে সীমিত স্থল অভিযান পরিচালনা করে। একই সঙ্গে ভারী গোলাগুলি ও কামানের গোলাবর্ষণ চলে।
উত্তর গাজার বিশাল অংশ বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চলমান অবরোধের কারণে খাদ্য ও মৌলিক চাহিদার তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে, যার ফলে বহু বেসামরিক নাগরিক দুর্ভিক্ষ ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন।
মানবিক সঙ্কটের তীব্রতা
ইসরাইলি বাহিনীর এই সামরিক অভিযানের ফলে গাজার হাজার হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অবরোধের ফলে মানবিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। বেসামরিক জনগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তার অভাব পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।
গাজার জনগণ ইসরাইলি আক্রমণের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছে, যা একটি চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে।
সূত্র : ওয়াফা নিউজ এজেন্সি