রাশিয়া কেন ইরানকে রক্ষা করছে না?

0
6
রাশিয়া কেন ইরানকে রক্ষা করছে না?
রাশিয়া কেন ইরানকে রক্ষা করছে না?

ইরান আক্রান্ত। একের পর এক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার সেনা ঘাঁটি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা, এমনকি রুশ-তৈরি এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রও। আর তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নীরব দর্শক। এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, রাশিয়া কি শুধুই উপকার নেয়, বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ায় না?

গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে অচ্ছুত শক্তি ইরানকেই আলিঙ্গন করেছিল রাশিয়া। পশ্চিমবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের সময় তেহরানের দিকে ঝুঁকেছিলেন। লাভও কম হয়নি। ইরান পাঠিয়েছিল ‘শাহেদ’ ড্রোন, যা ইউক্রেনে রুশ আক্রমণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু আজ যখন ইরান মুখোমুখি ইসরায়েলের সামরিক মেশিনের, তখন সেই পেছনের বন্ধন আর দৃঢ় নেই।

রাশিয়া ইরানকে হয়ত চায় পাশে, কিন্তু সামনে নয়। কারণ রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি কেবল আদর্শ বা বন্ধুত্ব নয়, একেবারে ঠান্ডা কৌশলে গড়া। তাদের হাতে যদি কিছু উন্নত যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা কৃত্রিম উপগ্রহ থাকে, সেগুলো ইরানের হাতে তুলে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না রাশিয়া।

কেননা, এসব অস্ত্র ইসরায়েল একের পর এক ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর পুতিন ইতিহাস জানেন- হারতে থাকা দলের পাশে দাঁড়ানো রাজনৈতিক আত্মহত্যা।

ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার একটি পুরোনো ও জটিল সম্পর্ক রয়েছে। মস্কো এমন কিছু করতে চায় না যাতে তেল উৎপাদনকারী উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে রাশিয়ার বোঝাপড়ায় ছন্দপতন ঘটে। তেল দামের উপর তাদের বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ নির্ভরশীল।

ইরানের দুর্বলতা কি রাশিয়ার সুবিধা?

অদ্ভুত হলেও সত্য- ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়ার কিছু লাভও হতে পারে। যেমন : মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অস্থিরতা তৈরি হলে বিশ্ব দৃষ্টি ইউক্রেন থেকে সরবে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম বাড়বে- রাশিয়ার অর্থনীতি একটু শক্তি পাবে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে তার কৌশলগত ব্যর্থতা প্রকাশ পাবে। ট্রাম্পের ‘ইরান চুক্তি’ পরিকল্পনা ধাক্কা খাবে। অর্থাৎ ইরানের দুরবস্থায় রাশিয়া এক ধরনের ছায়া-সুখ পাচ্ছে।

তাহলে কি রাশিয়া চায় ইরান ধ্বংস হোক?

না, এতটাও নয়। পুতিন জানেন, ইরান ভেঙে পড়লে অঞ্চলে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দক্ষিণ ককেশাসে- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া- রাশিয়ার স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর ইরান যদি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে যায়, তাহলে মস্কোর তেহরান-নিয়ন্ত্রণের খেলা শেষ হয়ে যাবে।

সেখানে রাশিয়া চায়

ইরান যেন পুরোপুরি ধ্বংস না হয়। আবার, ইরান যেন পারমাণবিক শক্তি হয়ে গিয়ে মস্কোর সমতুল্য মর্যাদা দাবি না করে। এটি এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা বজায় রাখার কৌশল- না খুব বেশি দুর্বল, না খুব বেশি শক্তিশালী।

রাশিয়া কী কূটনীতির মাধ্যমে খেলতে চায়?

সম্ভবত। সম্প্রতি পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের ইউরেনিয়াম রাশিয়ায় এনে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে। তবে সেটি একটি প্রযুক্তিগত সমাধান। মূল সমস্যা- বিশ্বের দৃষ্টিতে ইরান যেন ‘পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত নয়’- এই বার্তাটা প্রচার করা।

কিন্তু আমেরিকা কোনো রকম পারমাণবিক সক্ষমতা ইরানের হাতে দেখতে চায় না এবং ইরান সেটাকে মানে আত্মসমর্পণ হিসেবে।

রাশিয়া ও ইরান এখন এক অদ্ভুত সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ- একসঙ্গে হাঁটে, কিন্তু আলাদা স্বার্থে। ইরান চায় মিত্রের সহায়তা। রাশিয়া চায় শত্রুর দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে। এই সম্পর্কে আবেগ নেই, আছে হিসাব। এটা বন্ধুত্ব নয়, এটা শক্তির কূটনৈতিক ভারসাম্য।

ইরান যদি ভেবে থাকে রাশিয়া তাকে রক্ষা করতে ছুটে আসবে- তবে সেটা এক ভয়ংকর ভুল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here