সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহা

0
13
সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহা
সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহা

রোদের কারণে বাংলাদেশে বছরজুড়ে প্রায় সবাই নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হন। তীব্র রোদের কারণে পানিশূন্যতা, ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বকে খসখসে ভাব, ত্বক কুঁচকে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হয় এবং আমাদের আশপাশের অনেকেই এর ভুক্তভোগী। তবে এরপরেও রোদের থেকে ত্বক বাঁচাতে এখনও বেশিরভাগ মানুষ ভরসা করেন ছাতা কিংবা ছায়ার ওপর। পশ্চিমে তো বটেই, পাশের দেশ ভারতসহ নানান দেশেই অনেক মানুষ সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন এবং গরমের দিনে এটি সেসব জায়গার মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। তবে বাংলাদেশে এর চিত্রটি এখনও বিপরীত।

ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সামিয়া জামান জানান, বাংলাদেশের মানুষের ত্বকের ওপর রোদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে সারা বছরই রোদ পড়ার কারণে অনেকেই মনে করেন প্রাকৃতিকভাবে এখানে কোনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। তবে অনেকেই তীব্র রোদের কারণে নানা ত্বকের সমস্যাতেও ভোগেন। তবে এখানে মূল সমস্যা হিসেবে কাজ করে সানস্ক্রিনের দাম। কারণ বাজারে মানসম্মত সানস্ক্রিন সরবরাহ যেমন পর্যাপ্ত নয়, তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দামটাও চড়া। অনেকের পক্ষেই নিয়মিত বিদেশি ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান এবং কসমেটিকসের জন্য জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা যায় ৫০ থেকে ৮০ গ্রামের এক একটি সানস্ক্রিন বিক্রি হচ্ছে আটশো থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। যেহেতু সানস্ক্রিন একটি নিত্যব্যবহার্য পণ্য, প্রতিদিন বাইরে বের হবার আগেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কাজেই সেই হিসাবে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার আসলেও খরুচে ব্যাপার অনেকের জন্য। এ ব্যাপারে রাজধানীর একটি বিপণিবিতানের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, মুলত বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন মানসম্মত সানস্ক্রিন সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ফলে আমদানি সংক্রান্ত নানা শুল্ক এবং অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সব সানস্ক্রিনের দামই অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি দেশে উৎপাদিত মানসম্মত সানস্ক্রিনের অভাবের কথাও ঐ বিক্রয়কর্মী উল্লেখ করেন।

তবে বাজার ঘুরে বিভিন্ন দোকানে নানা ধরনের মোড়কে নানা নামের সানস্ক্রিন পাওয়া যায় কম দামে। যদিও কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা জানান এসব ‘নন-ব্র্যান্ড’ সানস্ক্রিন আসলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং সানস্ক্রিনের মতো পণ্যের যে ধরনের লাইসেন্স বা পণ্যের মান হওয়া প্রয়োজন। তার কোনটিই এসব ক্ষেত্রে মানা হয় না। ফলে ক্রেতাদের মধ্যেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব পণ্যের তেমন একটা চাহিদা নেই।

একই বিপণিবিতানের আরেক কর্মী জানান তাদের ক্রেতাদের মধ্যে আগের থেকে ত্বকের যত্ন নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে, এখন অনেকেই সানস্ক্রিনের খোঁজ করেন, কেনার পরিমাণও বেড়েছে। তবে এখনও বাজারে প্রচলিত বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সানস্ক্রিনের যে দাম সেটি বেশিরভাগ ক্রেতার নাগালের বাইরে বলেই জানালেন ঐ বিক্রয়কর্মী।

ঐতিহাসিকভাবে রোদ থেকে বাঁচতে আমাদের কৃষকেরা মাথাল পরতেন, এর কিছু পরে ছাতার ব্যবহার বেড়েছে। ঢাকা শহরেও এখন অনেককেই ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া অনেকের পক্ষেই প্রতিদিন দিনের বড় সময় ছাতা ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রোদের তীব্রতা এবং রোদে অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণও। এই কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে যেমন সচেতনতা প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার্য পণ্যের সহজলভ্যতা এবং সুলভ মূল্যের ব্যবস্থা করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here