রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুগন্ধিপ্রেম

0
18
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুগন্ধিপ্রেম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুগন্ধিপ্রেম

সুগন্ধি ব্যবহার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। তিনি সুগন্ধিপ্রেমী ছিলেন। সব সময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি নিজের কাছে সুগন্ধির পাত্র রাখতেন। তাঁর সুগন্ধির প্রভাব এতটাই বিপুল ছিল যে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লোকেরা বুঝত, এ পথ ধরে রাসুলুল্লাহ (সা.) হেঁটে গেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি আতরদানি ছিল। তিনি তা থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।’ (আবু দাউদ : ৪১৬২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিকাংশ সময় সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। না করলেও তাঁর শরীর থেকে সুঘ্রাণ ছড়াত। তাঁর সুগন্ধি ব্যবহারের অন্যতম কারণ ছিল, ফেরেশতার সঙ্গে সাক্ষাৎ, অহি গ্রহণ এবং সাহাবিদের সঙ্গে ওঠাবসার সময় সুঘ্রাণ ছড়ানো। (শামায়েলে তিরমিজি, ইমাম তিরমিজি, ব্যাখ্যা : মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩০৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সুগন্ধিপ্রিয় মানুষ। তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে তিনটি জিনিস অধিক প্রিয়। স্ত্রী, সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতল হয় নামাজের মাধ্যমে।’ (নাসায়ি : ৩৯৩৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির দরিয়া বইয়ে যেত। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ত সুবাস। সুঘ্রাণে মণ্ডম করত প্রতিটি রাস্তা, পাড়া-মহল্লা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনার কোনো পথ দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন লোকেরা তাঁর সুঘ্রাণ পেত। তারা বলত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই পথ দিয়ে অতিক্রম করেছেন।’ (মুসনাদুল বাজ্জার : ৭১১৮)।

সুগন্ধি ব্যবহার সব নবী-রাসুলের সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবির সুন্নত। আতর, বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান আবৃত রাখা।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২২৪৭৮)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে সুগন্ধি হাদিয়া এলে গ্রহণ করতেন। সাহাবিদেরও ফিরিয়ে দিতে নিষেধ করতেন। সুমামা ইবনে আব্দুল¬াহ (রা.) বলেন, ‘আনাস (রা.) সুগন্ধি ফেরত দিতেন না। তিনি বলতেন, নবী (সা.) কখনও সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।’ (বোখারি : ২৫৮২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কাউকে সুগন্ধি বস্তু দেওয়া হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা, তা সুঘ্রাণ এবং সহজে বহনযোগ্য।’ (আবু দাউদ : ৪১৭২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়- বালিশ, সুগন্ধি ও দুধ।’ (তিরমিজি : ২৭৯০)।

ইমাম তিবি (রহ.) বলেন, ‘উদ্দেশ্যে হলো- বালিশ, সুগন্ধি ও দুধের মাধ্যমে মেহমানকে সম্মান করবে। আর এটা সহজে বহনযোগ্য হাদিয়া। সুতরাং ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২০১৩)।

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘সুগন্ধি হলো রুহের খোরাক, আর রুহ হলো শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। সুগন্ধি ব্যবহারের দ্বারা রুহের শক্তি বৃদ্ধি পায়। সুগন্ধি মেধা, হৃৎপিণ্ড এবং সব অভ্যন্তরীণ অঙ্গের জন্য উপকারী। সুগন্ধি অন্তরকে প্রফুল্ল রাখে, আত্মাকে প্রশান্ত রাখে এবং রুহকে প্রশস্ত করে। সুগন্ধি ও পবিত্র রুহের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পার্থিব পছন্দনীয় দুটো বিষয়ের একটি ছিল। (শামায়েলে তিরমিজি, ইমাম তিরমিজি, ব্যাখ্যা : মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩১০)।

পুরুষদের জন্য জুমার দিন, ঈদের দিন, মুসলমানদের সমাবেশে উপস্থিতির সময়, ইলম ও জিকিরের মজলিসে, সহবাসের সময় এবং এ জাতীয় অন্যান্য সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। (শরহুন নববি, খণ্ড : ১৫, পৃষ্ঠা : ১০)

পুরুষ এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার ঘ্রাণ প্রকাশ পাবে, তবে রঙ গোপন থাকবে। অপরদিকে নারীরা মসজিদ বা অন্য কোথাও গেলে, এমন সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরুহ, যার ঘ্রাণ প্রকাশ পায়। তবে স্বামীর সামনে যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষদের সুগন্ধি এমন হবে, যার ঘ্রাণ প্রকাশ পাবে, তবে রঙ গোপন থাকবে। অন্যদিকে নারীদের সুগন্ধি এমন হবে, যার রং প্রকাশ পাবে, তবে ঘ্রাণ গোপন থাকবে।’ (আবু দাউদ : ২১৭৪)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here