ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে: মির্জা ফখরুল

0
8
ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে: মির্জা ফখরুল
ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে: মির্জা ফখরুল

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবিলম্বে ওই সুপারিশ সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে সেটাকে ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিভক্ত বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন, কেন করছেন, এটাও উপলব্ধি করতে হবে। মিডিয়াতে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে কতগুলো পক্ষ নিয়ে একেবারে নেমে যাওয়া হয়। প্রতিপক্ষকে একেবারে পুরোপুরি ঘায়েল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গত মঙ্গলবার সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যে বিষয়গুলোতে তারা একমত ছিলেন না, সেখানে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। সেই নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের। কিন্তু অবাক হয়ে তারা লক্ষ্য করলেন, সুপারিশে সেই বিষয়গুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐক্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।’
এ মুহূর্তে, এই অন্তর্বর্তীকালের সময়টা ঐক্যের সময় বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এখানে ন্যূনতম বিষয়গুলোয় একমত হয়ে একটা রাস্তা ধরা, একটা ট্র্যাক ধরা- সেই জায়গাটাকে বিভক্ত করে ফেলা হচ্ছে। কারা করছেন, কেন করছেন, এটা নিশ্চয়ই সবাই উপলব্ধি করতে পারছেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটি কথা তারা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চান, যা তারা এর আগেও বলেছেন। তারা মনে করেন, সব সংকটের মূলে যে বিষয়টা আছে, তা হলো, সত্যিকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের যে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, সেই পার্লামেন্টে এই সব সমস্যাকে সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সেভাবে দেশ চলবে। তারা সে কারণেই ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরেই নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। তখন অনেকে বলেছিল, তারা ক্ষমতা চান, সে জন্য অতি দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন। আজ প্রমাণিত হচ্ছে, এই নির্বাচনটা যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট শক্তিশালী হচ্ছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, এখানে একটা অরাজকতা তৈরি করতে চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি কিন্তু এইবার জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ। আপনি এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার, সেই সংস্কারগুলো করে আপনি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দেবেন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে পার্লামেন্ট আসবে, সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। সুতরাং আজকে যদি এর থেকে কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি যান, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে। এ কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘হঠাৎ করে তারা সুপারিশে দেখলেন, নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই। এটা তো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কমিশন দেবে। তারা জুলাই সনদ সই করেছেন। সনদে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) লেখা আছে। এটা দলগুলো নিজ নিজ ইশতেহারে দেবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল নিজস্ব প্রস্তাব অনুযায়ী আপত্তির অংশগুলোর মীমাংসা করবে।’
জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অনেকে দাবি তুলছেন যে আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোনো ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা রাষ্ট্রপতির নামে যায়, এটা যেকোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন।’
জোনায়েদ সাকি সতর্ক করে বলেন, ‘ঐকমত্য ছাড়া কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না। এটা সবার উপলব্ধি করা দরকার।’
প্রকাশনা উৎসবে আরও বক্তব্য দেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, লেখক ও সাংবাদিক শাহ্‌নাজ মুন্নী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here