প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই।
শনিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তার দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনি রয়েছে।
১৯৪১ সালের ২৬ জানুয়ারি বরিশাল জেলার চানপুরা ইউনিয়নের সরুখালী গ্রামে জন্ম নেন সুলতান মাহমুদ শরীফ। স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ষাটের দশকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন এবং আইয়ুব খান সরকারের শরীফ শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান যুব ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে ছয় দফা সম্পর্কিত দলিল মুদ্রণ ও যুক্তরাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন সুলতান মাহমুদ শরীফ। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশন অভিমুখে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিলেরও নেতৃত্ব দেন।
১৯৬৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার নেতৃত্বে প্রায় আট হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি লন্ডনের হাইড পার্ক থেকে মিছিল নিয়ে পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। সেদিন তিনি হাই কমিশনের পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। এ ঘটনার ছবি পরদিন লন্ডনের ‘দি টাইমস’ পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে লড়তে লন্ডন থেকে ব্রিটিশ আইনজীবী থমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগে সুলতান শরীফ ও তার স্ত্রী আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্যারিস্টার নোরা শরীফ ভূমিকা পালন করেন।
পরে লন্ডন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭০ সালের অগাস্টে ইয়াহিয়া খান লন্ডনের ক্লারিজস হোটেলে অবস্থান করলে তার নেতৃত্বে লন্ডন আওয়ামী লীগ সেখানে বিক্ষোভ করে।
একাত্তরে প্রবাসে একজন সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন সুলতান মাহমুদ শরীফ। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে তিনি ভূমিকা রাখেন। লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা সাপ্তাহিক ‘জনমত’ বিতরণ করতেন। একই বছর এপ্রিলে তিনি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কিছুদিনের জন্য দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালে সেক্রেটারিয়েট সদস্য এবং পরের বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রবাসে থেকে তিনি বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।
২০১১ সাল থেকে সুলতান মাহমুদ শরীফ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।