৫ মে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

0
43
৫ মে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া
৫ মে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া
যুক্তরাজ্যে ছেলের বাসায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ মে সোমবার দেশে ফিরতে পারেন। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার ওপর। এখন পর্যন্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত হয়নি বলে বুধবার সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে জানান খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
তিনি বলেন, ৪ ও ৫ মে ধরে পরিকল্পনা করছি। ম্যাডামকে দেশে আনার প্রস্তুতি চলছে। যদিও এখনও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কনফার্ম হয়নি। আমরা অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছি।
গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেসে যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। টানা ১৭দিন চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালে থেকে খালেদা জিয়া সরাসরি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেন। এই হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসাধীন চলছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য সহযোগিতা চেয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সেটা সম্ভব না হলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিমানের বিজনেস ক্লাসে করে দেশে ফিরতে পারেন।
খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে আনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেয়েছে কি না এবং এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কী ধরনের সহযোগিতা করবে- মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চান। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ওটা নিয়ে তারা কাজ করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, লন্ডন ক্লিনিক থেকে ম্যাডামকে পূণাঙ্গ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে তিনি দেশে আসতে পারবেন। তবে চিকিৎসার মধ্যেই তাকে থাকতে হবে।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান দেশে ফিরবেন। তিন নাতনি সবাই দেশে ফিরবেন কি না নিশ্চিত নয়।
খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা দেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও দীর্ঘ দিন পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জুবাইদা। তারেক রহমানের সঙ্গে তিনিও এক এগারো সরকারের সময় লন্ডন চলে যান।
জানা গেছে, রোজার ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। যা চলে কয়েক সপ্তাহ। ধীরে ধীরে শারিরীক অবস্থার উন্নতি হয়। তিনি আগের চেয়ে বেশ ভালো আছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়াকে ফলোআপ করছেন নিয়মিত।
লন্ডন থেকে গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, আমি লন্ডন এসেছি। ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৪ অথবা ৫ মে দেশে ফিরতে পারি। এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের ফেরার সম্ভবনা নেই। তারেক রহমানের ফেরা নির্ভর করছে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর। আমি, ডা. জাহিদ ম্যাডামের সঙ্গে আছি। এছাড়া ম্যাডামের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গৃহপরিচারিকাও সঙ্গে আছেন।
লন্ডনে থাকা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, এখানকার ডাক্তাররা যেসব পরীক্ষা করতে বলেছেন সেগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন; কত দ্রুত তিনি ছুটি দেয়ার মতো অবস্থায় যেতে পারবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার সময়ের আলোকে জানান, আমি ঢাকায় আছি। এখনও তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। আ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার পর তা ঠিক হবে। ম্যাডাম দ্য লন্ডন ক্লিনেকে সেরা চিকিৎসা পেয়েছেন। সেখানে বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেলেও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি হয়নি। এরপর চার বছরে তাকে কয়েক দফা ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালীর মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়ে যান। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা দরকার। গত অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দিলে সেই সুযোগ তৈরি হয়।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তবে লন্ডন ক্লিনিকে ঝুঁকির কথা চিন্তা করে লিভার প্রতিস্থাপন করেননি চিকিৎসকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here