স্টেডিয়াম বরাদ্দ নিতে দৌড়ঝাপ চলছেই!

0
10

ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে গত গত ৫ ডিসেম্বর শুরু হয় লাতিন-বাংলা সুপার কাপ নামের শ্রীহীন একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেখানে অংশ নেয় বাংলাদেশ, তথাকথিত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-২০ দল। তবে টুর্নামেন্টটি শুরু দিন থেকেই বিতর্কিত।

স্টেডিয়াম ও এর বাইরে প্রথম দিন থেকেই অব্যবস্থাপনায় ভরপুর ৩ জাতির অংশগ্রহণে আমেজহীন এই টুর্নামেন্ট। অব্যবস্থাপনায় সঙ্গে যুক্ত হয় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও। গত ৮ ডিসেম্বর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা রেড অ্যান্ড গ্রিন ফিউচার স্টার ও আর্জেন্টিনার ক্লাব অ্যাটলেতটকো চার্লোনের মধ্যকার ম্যাচ।

খেলাটি ১-১ গোলে ড্র হয়। ম্যাচশেষে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মাঠে প্রবেশ করতে যাওয়া এক সাংবাদিক বাধাগ্রস্থ হন নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা। পরিচয়পত্র ও টুর্নামেন্টের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখনোর পরও ওই সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে নিরাপত্তাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলে তারা। তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে মাঠ বরাদ্দ বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ ডিসেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ বরাদ্দ বাতিল করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এনএসসি।

ফলে স্থগিত হয়ে যায় লাতিন-বাংলা সুপার কাপের খেলা। যে কারণে গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে গড়ায়নি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচটি। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়. বেশকিছু শর্তে এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে মাঠ বরাদ্দ দিয়েছিল এনএসসি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি শর্ত মানেনি।

টুর্নামেন্টের মোট টিকিট বিক্রির হিসাব ও ৫০ শতাংশ অর্থ ম্যাচ শুরুর আগে পরিশোধের বিষয়টির পাশাপাশি স্থাপনা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। সবশেষ সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় এনএসসি স্টেডিয়াম বরাদ্দ বাতিল করে।

তবে এই বরাদ্দ নিয়ে দৌঁড়ঝাপ চলছেই! জানা গেছে এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ বরাদ্দ পেতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি এনএসসি থেকে শুরু করে দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের বড় কর্তাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন মাঠ পেতে। এ ব্যাপারে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কাল আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন,‘আমি এখনো আশাবাদি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাদেরকে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ক্লাব দুটোর খেলার অনুমোদন দেবে। সে আশাতেই বসে আছি। অনুমতি পেলে আমরা ম্যাচটি আয়োজন করব।’

তিনি যোগ করেন,‘আমরা টিকিট বিক্রির ৫০ ভাগ অর্থ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে জমা দিয়েছি। এখন অপেক্ষা অনুমোদনের।’ তবে এই আসাদুজ্জামানকে নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে। তিনি নাকি নিজ ব্যবসার স্বার্থে দেশের সম্মান নষ্ট করছেন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে। তিনি কখনও ফুটবলের সঙ্গে ছিলেন না। আসাদুজ্জামান মূলত বক্সিং জগতের লোক হিসেবে পরিচিত।

তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, পেশাদার বক্সিং খেলা আয়োজনের নামে তিনি ‘আদম’ পাচারের কাজে লিপ্ত। দেশ থেকে বক্সার পরিচয়ে বিভিন্ন লোককে আসাদুজ্জামান ইতোমধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় পাচার করেছেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। কিছুদিন আগেও নাকি তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে খেলার জগতের বাইরের কয়েকজন লোককে বক্সার পরিচয়ে অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিতে রেখে এসেছেন। প্রতিজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা করে। অভিযোগে আরও জানা যায়, কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে তিনি মিথ্যাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে তা সত্য মানতে বাধ্য যেকোনো মানুষ।

এই যেমন লাতিন-বাংলা সুপার কাপ নামের টুর্নামেন্ট উপলক্ষে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই সাবেক তারকা ফুটবলার কাফু ও ক্লাউদিয়া ক্যানিজিয়ার ঢাকা সফরকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছেন আসাদুজ্জামান। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তিনি গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, কাফু ও ক্যানিজিয়া ঢাকায় আসছেন।

এমনকি তাদের নাম ও শুভেচ্ছা ভিডিওবার্তা দিয়েও প্রচারণা চালিয়েছিল এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। কিন্তু সেই ভিডিওবার্তাগুলো এআই দিয়ে তৈরি বলে সন্দেহ করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা! যদিও এখন আসাদুজ্জামান বলছেন, আর্থিক সংকটের কারণেই কাফু ও ক্যানিজিয়াকে ঢাকায় আনতে পারছেন না। এতেই প্রমাণ করে যে তিনি অপেশাদার ক্রীড়া সংগঠক।
তাই ফুটবলবোদ্ধাদের প্রশ্ন অপেশাদার একজন লোক কিভাবে বা কার প্ররোচনায় ফুটবলাঙ্গনে এসে এমন শ্রীহীন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের সাহস পেল।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার নাম ব্যবহার করে সেখানকার পাড়া-মহল্লার ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দল নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখলেন তথাকথিত বক্সিং সংগঠক আসাদুজ্জামান?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here