কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা দেওয়ার জন্য ২ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। শনিবার(৫ অক্টোবর) সেখান থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় আপাতত তা সম্ভব হচ্ছে না।
শুরুতে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন থেকে সপ্তাহে কলকাতা রুটে ১টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা থাকলেও তারা প্রস্তুতি নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ বলছে, বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক রূপান্তরের সময়সূচি অজানা থাকায় তারা টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। অপরদিকে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। টার্মিনাল এখনো রেডি পুরোপুরি না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর দেশের বিমান খাত ও পর্যটন শিল্পের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অর্থনীতি, হোটেল-মোটেল ব্যবসা, রিসোর্ট ও পরিবহন খাতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে কক্সবাজারে শুধু অবকাশযাপন নয়, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও বৃহৎ পরিসরের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজনও সহজ হবে। এতে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগও ব্যাপক হারে বাড়বে।
বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরটি কখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হবে, তা এখনো বিমানকে জানানো হয়নি। এই অনিশ্চয়তার কারণেই তারা টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেননি।
তিনি আরও জানান, বিমান কলকাতা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে সাপ্তাহিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক রূপান্তরের সময়সূচি অজানা থাকায় প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানান, কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনো অনুমোদন পাইনি।
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, নিউইয়র্ক থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ফিরে আসার পর আমরা ৫ অক্টোবর অনুমোদন পাওয়ার আশা করছি।
মেহবুব খান জানান, বেবিচক ইতোমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নীত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থাকে (আইসিএও) অবহিত করেছে। তবে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কবে থেকে পরিচালিত হবে, তা নির্ভর করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওপর।
বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন সুবিধা ইতোমধ্যেই চালু রয়েছে। বর্তমানে, নতুন টার্মিনাল আংশিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে— আগমন বিভাগটি চালু হয়েছে, তবে প্রস্থানগুলো এখনো পুরোনো ভবন থেকেই অব্যাহত থাকবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক টার্মিনাল প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া জানান, টার্মিনালের নির্মাণকাজের ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অভ্যন্তরে টাইলিং, বৈদ্যুতিক তার এবং এসি স্থাপনের মতো কাজ চলছে, যা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টার্মিনাল ভবনের বাইরের অংশে কাচের প্যানেল স্থাপনে কর্মীরা ব্যস্ত। বোর্ডিং ব্রিজ নির্মাণ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ৩৬২ কোটি টাকার টার্মিনাল নির্মাণ কাজের গতি পেয়েছে।
অন্যদিকে, এক হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার রানওয়ে সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াাইডব্লিউইবি) এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসি)।