ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের মাঝেই সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বললেন, ‘দিদি আছেন, সম্পত্তি রক্ষা হবে।’
ওয়াকফ সংশোধনী আইন সংসদের দুই কক্ষে পাশ হওয়ার পর থেকেই তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও প্রতিবাদ। গত শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কলকাতার পার্ক সার্কাস সাতমাথা মোড় ঘিরে বিক্ষোভে শামিল হয় একাধিক মুসলিম সংগঠন। সেই আঁচ ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের আরো কিছু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। ঠিক এই আবহেই বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন, ভয় নয়, ‘দিদি’ পাশে আছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস
জৈন সম্প্রদায়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নবকার মহামন্ত্র দিবস’-এর মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে একটা দুঃখ আছে। আপানারা ভরসা রাখুন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন হয়। সবাইকে একসাথে থেকে বাঁচতে হবে। জিও, জিনে দো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা সবাই একসাথে বাঁচার কথা বলুন। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, দিদি আছে, দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।’
ওয়াকফ আইন ও কেন্দ্রীয় প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ সংশোধনী বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে সই করেছেন। ইতোমধ্যেই গেজেটেও প্রকাশিত হয়েছে নতুন আইনটি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই আইনকে ‘সমগ্র সমাজ ও মুসলিমদের স্বার্থে প্রণীত চমৎকার আইন’ বলে বর্ণনা করেছেন। তার কথায়, ‘এখন ওয়াকফের পবিত্র চেতনা ও মুসলিমদের অধিকার সুরক্ষিত হবে।’
তবে একইসাথে তিনি কংগ্রেসকে বিঁধে বলেন, ‘তোষণের রাজনীতির মাধ্যমে কিছু মৌলবাদী নেতা সম্পদ পেয়েছেন, কিন্তু সাধারণ মুসলিমরা কী পেয়েছেন?’
বিরোধীদের অবস্থান
ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে অসাংবিধানিক বলে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসও শুরু থেকেই সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু ভোটের আস্থা অর্জনে এই ইস্যুকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল।
মমতার বার্তা ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীনতার সময়কার বিভাজনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বিভাজন তো আমরা করিনি। সেই স্বাধীনতার সময় হয়েছে। কেউ কেউ আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উস্কানি দিচ্ছে। তাতে পা দেবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলায় ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছেন। আমরা কী করব, তাঁদের বের করে দেব? এটা কখনো হবে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার এই মন্তব্য তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সংখ্যালঘুভিত্তিক সমর্থনকে ধরে রাখার কৌশল হিসেবেই উঠে এসেছে। পার্ক সার্কাসে বিক্ষোভ, কেন্দ্রের ওয়াকফ আইন এবং বাংলায় সংখ্যালঘুদের মনোভাব- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে বেশ উত্তপ্ত, তা স্পষ্ট। আর সেই আবহেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি ও সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি সর্বদা পাশে থাকবেন।
সূত্র : আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস ও অন্যান্য