জন্মভূমি প্রতিবেদক : নিউ ইয়র্কের কুইন্সের রীচসুন্ডইলে হরিমন্দির বাংলাদেশী প্রবাসী মতুয়া সম্প্রদায়ের নিজস্ব মন্দির। নিউ ইয়র্কের অন্যান্য মন্দির থেকে এই মন্দিরে একটি সাতন্ত্র্যবোধ আছে। এক সময়ের বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া নিম্নবর্ণের মানুষের আত্মসামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির মুক্তির লক্ষ্যে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের আধ্যাত্মিক শক্তি ও বাস্তবতায় নমানূন সম্প্রদায় ঘুরে দাঁড়ায়। গুরুচাঁদ ঠাকুরের বিশেষ লক্ষ ছিলো শিক্ষার আলোকে সমাজকে আলোকিত করা। সেই আদর্শের স্কুল-কলেজ সহ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের সুশিক্ষিত করে তোলে। সারা ভারতীয় উপ-মহাদেশে ও পৃথিবী জুরে আজকের শিক্ষিত মতুয়া সম্প্রদায় তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার সংকল্পে অবিচল আছে।
গত ১১ই মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় হরিমন্দিরে শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তি পালন করে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের নেতৃবৃন্দ। এদিনের গুরুত্ব অনেক মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে। পূজা-অর্চ্চনা মহা ভোগ, আলোচনা সভা, দ্বাদশ আজ্ঞাপাঠসহ ভক্তিভরে ঠাকুরের জন্মজয়ন্তিতে ভক্তরা অংশ নেয়।
এ উপলক্ষে একটি আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ ঠাকুরের জীবনদর্শন, মতুয়া সম্প্রদায়কে শিক্ষার আলো দিয়ে আলোকিত করার অলৌকিক শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানায়।
আলোচনায় জন্মজয়ন্তি পালনের সেবক ডা. সমীর সরকার ভক্তকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন। আলোচনায় শাশ্ত্রী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তি প্রসঙ্গ ছাড়াও হরিমন্দিরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনেকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় সকল ভক্তদের অনুষ্ঠানের অর্থে। ব্যাংকের লোন নিতে গিয়ে ডা. সমীর সরকারের সাহায্য নিতে হয়। অর্থাৎ মন্দিরের লোনটি হয় ভক্ত ডা. সমীর সরকারের নামে। যদিও এই সময় হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আন্তর্জাতিক মতুয়া মিশনের সাথে একটি চুক্তিপত্রও স্বাক্ষর হয়। এর অর্থ যথা সময়ে ডা. সমীর সরকার মন্দিরকে মতুয়া সম্প্রদায়ের নিজস্ব গঠনের নামে ফিরিয়ে দিতে হবে।
মন্দির প্রতিষ্ঠার ক’বছর পরই পরস্পরের মাঝে আত্মকলহ ও দূরত্ব বাড়তে থাকে। টানা পাঁচ-ছয় বছর যাবত মন্দির নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ সংঘাত মনমালিন্য-বাকবিতন্দা, সোসাল মিডিয়ার কাদা ছোড়াছুড়ি সহ নেতৃবৃন্দের সম্পর্ক তলানিতে যায়। এসব নিয়ে মামলা কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।
সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য মন্দিরে প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ডা. প্রভাত দাস ও ডা. নিহার সরকার. ডা. সমীর সরকার, সুশীল সাহা গবিন্ধ বিশ্বাস, অনুকুল অধিকারী তারা মিলে একটি লোন নিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ মতুয়া মিশনের নামে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এর আগে সংগঠনের পদ-পদবী ও কমিটি নিয়ে বিস্তর ঠেলাঠেলি হয়। এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়। কেউ কেউ মন্দিরে আসা থেকে বিরত থাকেন। বিষয়টি বাংলাদেশী প্রবাসী হিন্দুদের কাছে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মন্দিরের ভক্ত যার নামে মন্দিরের লোন সেই ডা. সমীর সরকারকে নিয়ে প্রতিপক্ষে বিরূপ মনোবৃত্তি মতুয়াদের মাঝে প্রতিক্রিয়া হয়।
এই অবস্থায় গত বছর দুর্গা পূজা দু’পক্ষের গোঁজামিলে হলেও আত্মকলহের আগুন জ্বলতে থাকে। অধিকাংশ ভক্ত বিশ্বাস করতে পারে নাই ডা. সমীর সরকার মন্দির মতুয়াদের নামে ফিরিয়ে দিবেন? এমন সন্দেহ থেকেই পরিবেশ আরো গাঢ় হয়।
ব্যক্তিগতভাবে ডা. সমীর সরকার কোন দিনই মন্দির ফিরিয়ে দেবেন না এমনটি বলেননি বরং তিনি প্রায়ই মন্দিরের জটিলতা নিয়ে মুখ খুলেছেন। তবে কালক্ষেপণ হয়েছে অনেক ফলে দ্বন্দ ও সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে অনেক।
এর আগে ডা. সমীর সরকার সাপ্তাহিক জন্মভূমিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অবিলম্বে হরিমন্দির আমার নাম থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ সংগঠনের নামে ফেরত দেবেন।
একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ডা. সমীর সরকার মন্দির মতুয়াদের নামে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করলেও অন্যেরা বিশ্বাস করতে পারছে না। সম্ভবত: পরস্পরের মাঝে বিশ্বাস হীনতার জটিলতার অন্যতম কারণ।
সুসংবাদ অতি সম্প্রতি এই জটিলতা নিরসনে একটি প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। এক সভায় ডা. প্রভাত দাস, ডা. সমীর সরকার ও অনুকুল অধিকারী সহ তিন জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মন্দিরে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা পরিচালনা ও যতদ্রুত সম্ভব ব্যাংকের লোন নিয়ে ডা. সমীর সরকারের নাম থেকে মন্দিরের নামে হস্তান্তর করা।
জন্মজয়ন্তির আলোচনা সভায় ডা. সমীর সরকার নিজে মন্দিরের জটিলতা নিয়ে ভক্তদের মনোভাব জানতে চায়। এ কারণেই এদিনের আলোচনায় প্রায় সকল বক্তার কাছ থেকেই সংগঠনের জটিলতার প্রসঙ্গ উঠে আছে। তারা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান করে আবার সবাই মিলেমিশে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে গুরুত্বারোপ করেন। অনেকেই সংগঠনের সাংগঠনিক রূপরেখা, ব্যাংকের লোন, পরস্পরের মাঝে আগের মতো সুন্দর সম্পর্কের প্রসঙ্গ তোলেন।
এই সভায় ডা. সমীর সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সুশীল সিন্হা, নিহার সরকার, অনুকুল অধিকারী, শ্যাম বৈদ্য, সমীর মন্ডল, এরিক গায়েন, অরবিন্দ বিশ্বাস, অসীম সরকার, পারিজাত দাস, মতিলাল দেব, কমলেল ঢালি, ষিখা সিন্হা, কৃষ্ণা সরকার, কলেন বিশ্বাস, শ্রীমতি অধিকারী ও রতন তালুকদার প্রমুখ।
আগামী ১৯শে মার্চ হরিমন্দিরে বার্ষিক বারুণী অনুষ্ঠিত হবে। এবারের বারুণী অনুষ্ঠানে দায়িত্ব প্রাপ্ত সেবক সসীম সরকার।
সভায় শেষ বক্তা ও অনুষ্ঠানের সেবক ডা. সমীর সরকার দৃঢ়তার সাথে বলেন, সকলের বক্তব্য শুনে আমি নিজেও অনুভব করি সমস্যার অতি সমাধান প্রয়োজন, তিনি বলেন, আশা করছি আগামী দু’তিন মাসের মাঝেই আমরা লোন নিয়ে মন্দির সংগঠনের হাতে হস্তান্তর করতে পারবো।