top-ad
২৬শে জুলাই, ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১
banner
২৬শে জুলাই, ২০২৪
১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১

পরিবারের অজান্তে জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছেন তরুণরা 

ঢাকা ডেস্ক : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। ২৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন সাভারের উত্তর রাজাশনে। এর আগে সমাজকল্যাণ বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন সরকারি বাঙলা কলেজে। অনার্স শেষ করলেও আর্থিক অনটনের কারণে মাস্টার্স শেষ করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। চলতি মাসের ৯ তারিখে বাসা থেকে বের হয়ে যান এই ব্যক্তি। যাওয়ার আগে বাসায় রেখে যান তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। এর আগে তিনি ইসলামি চারটি বই কিনে পড়াশোনা করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়ারি করেন (জিডি নং-৮৯৭)। পরিবারের ধারণা, তিনি হয়তো ধর্মান্ধ হয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত শতাধিক ব্যক্তির নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি—এসব ব্যক্তি ধর্মান্ধ হয়ে বেহেস্ত লাভের আশায় ঘর ছাড়েন। এদের মধ্যে অনেকে ফিরে এসেছেন আবার অনেকের সন্ধানই পাওয়া যাচ্ছে না। র‍্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ পাহাড়ে অবস্থানরত ৫৯ জন এবং প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনো যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমপির থানাগুলোতে ৫ হাজার ৯৩৭টি নিখোঁজের জিডি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জিডি হয়েছে ডিএমপির মিরপুর বিভাগে। এই বিভাগের আট থানায় এক বছরে ১ হাজার ৪৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছে। সবচেয়ে কম নিখোঁজ রমনা বিভাগে। এই বিভাগের ছয়টি থানায় এক বছরে ২৫৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। সাধারণত কাউকে খুঁজে না পেলে স্বজনেরা থানায় জিডি করেন। এছাড়া কারো গৃহকর্মী, গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী হঠাৎ উধাও হলে; এতিমখানা বা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ না বলে চলে গেলে, প্রেম বা অন্য কোনো কারণে নারী বা পুরুষ হঠাৎ উধাও হলে, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মানুষ ও শিশু হারিয়ে গেলে, কেউ অপহৃত হলে জিডি হয়। এ রকম ১০-১৫টি কারণে নিখোঁজ-সংক্রান্ত জিডি হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপি। তবে বাসা থেকে বের হয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিরাই সাধারণ জঙ্গিবাদে জড়ান। এক্ষেত্রে তারা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যান। তখনই তাদের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বিভিন্ন সময়ে র‍্যাবের অভিযানে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৫৯ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কনটেন্ট। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান মাইমুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব এবং ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার। সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফের প্রধান নাথামবমের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময় নাথামবমের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়, এরপর তারা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।

তিনি বলেন, জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর সক্ষমতা নেই। তাদের সব ধরনের নেটওয়ার্ক তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ১৫ থেকে ২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, তারা আসলে কোন উদ্দেশ্যে ঘরছাড়া হয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় খবর