top-ad
২৭শে জুলাই, ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১
banner
২৭শে জুলাই, ২০২৪
১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১

বাগদানের আংটি বিক্রি করে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছিলেন জয় ফক্স

যুক্তরাজ্যের উইভেনহো শহরের ভেতর দিয়ে যে নদীটি বয়ে গেছে, তারই পাশের এক গ্রামে থাকতেন জয় ফক্স। ২০ বছরে বয়সে তাঁর বাগ্দান হয়েছিল। কোনো কারণে বিয়েটা ভেঙে যায়। ভাঙা বিয়ে আর ভাঙা হৃদয় নিয়ে জয় ঠিক করলেন, বিশ্ব ঘুরে দেখবেন। ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে বেরিয়ে পড়লেন। তার আগে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহেই কেটে গেছে এক দশক। তবে মায়ের মুখে মিসর, চীন আর ভারতের বিভিন্ন গল্প শুনেছিলেন। বড় ভাই অ্যালানের কাছে শুনেছিলেন ভেনিস শহরের কথা। এসব গল্পের জায়গা তিনি নিজের চোখে ঘুরে দেখতে চেয়েছেন। জয়ের বাবা ছিলেন রয়্যাল স্কটসের বাদ্যদলের প্রধান বাদক। সেই সূত্রেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন মা আর ভাই।
কীভাবে প্রথমবার ঘর থেকে বের হলেন জয়? সে এক গল্প। শোনা যাক জয়ের মুখ থেকেই, ‘প্রথমে বাগ্দানের আংটি বিক্রি করলাম। আমার গ্রাম থেকে ডোভারে গেলাম। তারপর ট্রেনে করে ঘুরলাম ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড আর ইতালি। সেই শুরু। এখন আমার বয়স ৮৯। এখনো আমি বিশ্বের নানা প্রান্ত ঘুরে দেখতে চাই। ঠিক প্রথম দিনের মতোই।’
ইতালিতে গিয়ে জয়ের লুইজি নামের এক লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। দুজন মিলে ঘুরলেন পোর্টোফিনো, রাপালো, মিলান ও আরও অনেক শহর। জয়কে নিয়ে বিশ্বের সব গির্জা ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন লুইজি। কিন্তু জয়ই বিদায় নিলেন। ফিরে আসলেন নিজের গ্রামে। বাড়িতে ফিরে নিজেকে মনে হলো নতুন এক মানুষ। বেশ ফুরফুরে লাগল। কিছুদিন পর হাতে এল লুইজির পাঠানো তাঁদের যুগল ছবি। ভাঙা বিয়ের কষ্ট বিভিন্ন শহরে ঘুরতে ঘুরতে বিলিয়ে এসেছেন, ভুলেও গেছেন।
জয়ের পরিবার একসময় ইংল্যান্ড থেকে কানাডায় চলে গেল। জয়ের জন্য বিষয়টা হলো দারুণ আনন্দের। কানাডা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন জয়। ঘুরতে ঘুরতেই আরও এক পুরুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। তিনিও ঘুরে বেড়ান। খুব অল্প সময়ের পরিচয়ে তাঁকে বিয়ে করলেন জয়। সংসার পাতলেন। তিন সন্তানের মা হলেন। আর সঙ্গী, সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
জয় বলেন, ‘আমার জীবনসঙ্গী আমাকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বলেছেন। তার সঙ্গে আমি অনেক নদী আর জলপ্রপাত দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্র, মোনাকো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কুক আইল্যান্ডের নানা প্রান্ত ঘুরেছি।’ একে একে সন্তানেরা বড় হলো। তাঁদের আলাদা সংসার হলো। এর ফাঁকে ফাঁকেও একা একা ঘুরেছেন জয়। একা ঘুরে বেড়ানোর মতো আনন্দ তিনি আর কিছুতেই পান না।
নিজের ৬৫তম জন্মদিনে জয় একাই গেলেন স্কটল্যান্ডে, যেখানে তাঁর জন্ম। যখন তাঁর তিন বছর বয়স, স্কটল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে চলে এসেছিল তাঁর পরিবার। রয়্যাল স্কটস অব এডিনবার্গের ব্যারাকে যান জয়। একসময় এখানেই থাকতেন তাঁরা। খুঁজে বের করেন নিজের জন্মস্থান। সেখানে খানিকক্ষণ কাটান। জয় বলেন, ‘আমি আমাদের বাসাটার দিকে তাকিয়ে আছি। সন্ধ্যা নামল। এমন সময় কোত্থেকে যেন এক বংশীবাদক বের হয়ে এল। সে বাঁশিতে বিলাপের সুর তুলতে লাগল। আমার ভেতর যে কী হয়ে গেল, কোনো ভাষায় তা বর্ণনা করা সম্ভব না। স্কটল্যান্ড সব সময়ই আমার প্রিয় দেশ। কেননা, সেখানেই আমার জন্ম।’
২০১৫ সালে মারা যান জয়ের জীবনসঙ্গী। আবারও একা হয়ে পড়েন জয়। ৮০ বছর বয়সে একাই একটা ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে বের হলেন ইউরোপে। ৮৪তম জন্মদিন জয়ের সঙ্গী হয়েছিল মেরু জ্যোতি (নর্দান লাইটস), তখন তিনি ছিলেন নরওয়ে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। সেই গাড়িতে ঘুরেছেন সারা দেশ। একটা মোটরবোটে করে ডলফিনের সঙ্গে নদীতে ঘুরেছিলেন। সেটি তাঁর বিশ্বভ্রমণের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
জয় বলেন, ‘পানি আমি ভীষণ ভয় পাই। কিন্তু ইতিমধ্যে টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। সেটা উশুল করতেই নামলাম। ওহ, পুরোটা সময় আমি নিজের কণ্ঠনালি উজাড় করে দিয়ে চিৎকার করেছি। সে কী উত্তেজনা! ডলফিনরা মোটরবোটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধরে ফেলতে চাচ্ছে। আমি শাঁই শাঁই করে বাতাস কেটে এগিয়ে যাচ্ছি। ভাগ্যিস, ভয়কে জয় করে পানিতে নেমেছিলাম!’
জয় জানান, তাঁর কোনো ‘ট্যুরিস্ট অ্যাকটিভিটি’ ভালো লাগে না। বরং তিনি এমন সবকিছু দেখতে চান, করতে চান, যা তাঁর হৃদয়ে গেঁথে থাকে। নিজের সঙ্গ ভালোবাসেন। এখনো নিজে মোড়ের দোকানে গিয়ে স্যান্ডউইচ আর কফি অর্ডার করে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামা দেখেন। এখন তাঁর বয়স ৮৯। পরের জন্মদিনে আবার তিনি ফিরতে চান আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে, ইতালির লেক কোমোয়, যেখানে বন্ধুত্ব হয়েছিল লুইজির সঙ্গে।

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় খবর