আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ বিদেশে থাকলেও বিচার চলবে, দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দেশে ফিরতেই হবে। এক্ষেত্রে সরকার কোনো ছাড় দেবে না। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। তদন্ত, মামলা, গ্রেপ্তার সবকিছু একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সরকার এখানে দুদককে এড়িয়ে আগ বাড়িয়ে কেন ব্যবস্থা নেবে? সরকারের দুর্নীতিবিরোধী যেসব সংস্থা আছে, তাদের কোনো ব্যর্থতা থাকলে তারও বিচার হবে। গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। এসময় তদন্ত চলা অবস্থায় বেনজীর যে দেশের বাইরে চলে গেলেন এটা কি অস্বাভাবিক না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- না, এখন তিনি না থাকলে কি বিচার হবে না। এখন তারেক রহমান বাইরে আছে বলে কি ট্যাক্সিফিকেশন মামলা হয়নি, রায় হয়নি? একসময় তাকে আসতে হবে। বেনজীর যদি মামলায় দুর্নীতিবাজ সাব্যস্ত হয়, দেশে তাকে আসতেই হবে। এখানে সরকার কোনো আপস করবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশে ’৭৫-পরবর্তী কোনো শাসক ও সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারেনি। শেখ হাসিনার সরকার সেটা দেখিয়েছে। ব্যক্তি দুর্নীতি করতে পারে।
দুর্নীতি করার পর সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা দেখতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সরকার বেনজীরকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তুলে দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনি কি দেখেছেন কে তুলে দিয়েছে? ফখরুলের অভিযোগ, সে তো সবদিকে ব্যর্থতার দগদগে খত। সে ব্যর্থ নেতা। সে ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করলো, নির্বাচনেও ব্যর্থ, আন্দোলনেও ব্যর্থ। নিজের দলের লোক সংসদে পাঠায় কিন্তু নিজে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। সে কী বললো, না বললো সব বাস্তবতাবিবর্জিত। সরকার তুলে দিয়েছে, আমি মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চাই, সরকারের কারা তাকে তুলে দিয়েছে। কোন অথরিটি তাকে তুলে দিয়েছেন, বলুন? অন্ধকারে ঢিল ছুড়লে হবে না। এদিকে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির খবর তার পদে থাকা অবস্থায় গণমাধ্যমে প্রকাশ না পাওয়ায় প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বেনজীর র্যাবের ডিজি, আইজি ও আইজিপি থাকা অবস্থায়ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাহলে সরকার এখন কেন সে দায় নেবে না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদেরের পাল্টা প্রশ্ন-আপনি কোন টিভিতে কাজ করেন? বেনজীর কখনো দুর্নীতি করেছে আপনি বলতে পেরেছেন? মিডিয়ায় কে বলেছে? সবশেষে বলেছে কালের কণ্ঠ। আপনারা কেউ বলেননি। একটা পত্রিকা বলেছে সেটা কালের কণ্ঠ। তারপর তো এটা নিয়ে যখন একটা অভিযোগ উঠেছে, আপনারা এটা নিয়ে যদি বলতে পারতেন যে- এই এই দুর্নীতি করছেন।
সেই সাহসটা তো দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, এখন সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। আপনি কী করে বলেন সরকার জেনেও এটা গোপন করেছে? হাউ ইউ কনক্লুড দিস? আপনি পারেন না এটা। আমি বলেছি, সরকার এখানে কারও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ইম্পিউনিটি দিয়েছে কিনা, সেটা হলো বড় কথা। তিনি বলেন, এ দেশ থেকে টাকা পাচারের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি শুরু হয়েছে বিএনপি’র আমল থেকে। তারা ক্ষমতায় আসলে বিএনপি নেতারা অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের মহোৎসবে মেতে ওঠে। এটা দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত সত্য। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিএনপি’র দণ্ডিত পলাতক নেতা তারেক রহমান বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি কোন দেশে হয় না, এই দাবি কেউ করতে পারে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, সরকারপ্রধান কোনো প্রকার দুর্নীতি করেন বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন- এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে কেউ দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা আপাদমস্তক সৎ রাজনীতিক, এটা বিশ্বস্বীকৃত। তার জনপ্রিয়তার মূলে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম ও সৎ জীবনযাপন করেন। তিনি বলেন, বিএনপি’র প্রধান নেতাই দণ্ডিত। পলাতক তারেক রহমান চিহ্নিত অপরাধী। এমন লোক যে দলে নেতৃত্ব দেয়, সেই দল জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। জনগণের বিশ্বাসও রাখতে পারে না। তারা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরপর পাঁচবার তারা দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেই বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে হঠাৎ ৭ ধারা বাদ দিয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চোরের রাজা মহারাজা হচ্ছে বিএনপি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।