top-ad
২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০
২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩
৮ই আশ্বিন, ১৪৩০

ভারতের সাথে বিরোধ মেটাতে বাংলাদেশ পর্যন্ত করিডোরের কথা ভাবছে নেপাল

নেপাল থেকে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত একটি করিডোরের জন্য ভারত যদি নেপালকে জমি হস্তান্তর করে, তাহলে নেপালও ভারতকে ৩১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা হস্তান্তর করতে পারে। নেপাল-ভারত সীমান্ত বিবাদ মেটাতে এমনই একটা বিকল্পের কথা সামনে এসেছে।

এখন ভারতের ভূখণ্ড দিয়েই নেপাল আর বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য চলাচল করে। তবে নেপাল চাইছে, ‘চিকেন নেক’ বলে পরিচিত ভারতের ওই এলাকা যদি নেপালকে হস্তান্তর করে দেয়া হয়, তাহলে তারাও পশ্চিম নেপালের যেসব এলাকা নিয়ে তাদের সাথে ভারতের বিরোধ আছে, ওই অঞ্চল ভারতকে দিয়ে দিতে পারে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচন্ডার সাম্প্রতিক ভারত সফরের পরে দু’দেশের সীমান্ত বিরোধ মেটাতে এমনই একটা বিকল্পের কথা ভাবছেন নেপালি বিশেষজ্ঞরা।

তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পশ্চিম নেপালের কালাপানি, লিপুলেখ নদী অঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের চিকেন নেক করিডোর দুটিই ভারতের কাছে সামরিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারত সম্ভবত এমন বিকল্পে রাজি হবে না।

প্রচন্ডার ভারত সফরের পরেই বিকল্পের খোঁজ
সম্প্রতি ভারত সফরে আসা নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচন্ডা বলেছেন, তার দেশ শুরু থেকেই বাংলাদেশে সরাসরি একটি রুট চায়।

নেপালে ফিরে যাওয়ার পর প্রচন্ডা বলেছিলেন, তিনি নেপালি সীমান্ত বিশেষজ্ঞদের সাথে বেশ কয়েকটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু তার পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি।

নেপালের সীমান্ত বিশেষজ্ঞ বুধিনারায়ণ শ্রেষ্ঠা বলেন, কালাপানি এলাকা নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিরোধ গত ছয় দশক ধরে চলে আসছে।

তার কথায়, ‘যে মানচিত্র নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিরোধ, তার সমাধানের একটা উপায় হতে পারে আন্তর্জাতিক রীতি মেনে এলাকা বিনিময় করা। লিপুলেখকে সীমান্ত নদী হিসেবে বিবেচনা করে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ৩১০ বর্গকিলোমিটার জমি ভারতের জন্য ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। আবার ভারতের কাছ থেকে পূর্বদিকের ৩১০ বর্গকিলোমিটার জমি নিয়ে একটি করিডোর করা যেতে পারে, যাতে পূর্ব নেপালের কাকরভিট্টা সীমান্ত থেকে সরাসরি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছনো যায়।’

সীমান্ত বিরোধে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং ভারত বিশ্বাস করে যে তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নিবে না যেন চীনের সাথে ভারতের বর্তমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়।

অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এস বি আস্থানা বলেছেন, ‘এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য সঠিক সময় নয় এটা। আমরা অন্য অনেক সমস্যার সাথে লড়াই করছি।’

ভারত ও চীনা সেনারা বেশ কিছুদিন ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মুখোমুখি অবস্থান করছে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডা মনে করেন, ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের সাথে নেপালের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

তবে ভারতের সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের মনে হয় না যে এখনই কোনো বিকল্প নিয়ে আদৌ আলোচনা করা হচ্ছে।

তা সত্ত্বেও, তাদের মতে, প্রচন্ডা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে যদি দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ মেটানোর কোনো ব্যবস্থাপনা কাজ শুরু করে, তা হবে বিরাট সাফল্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রচন্ডার সাথে দেখা করার পর বলেছিলেন যে ওই বৈঠক ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ককে হিমালয়ের উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ তাদের জনগণের অনুভূতির ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।

ভারত, নেপাল ও কালাপানি বিরোধ
নেপালি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় প্রচন্ডা বলেছিলেন, ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য অন্য বিকল্প পথ খোঁজা যেতে পারে।

কালাপানি এলাকার মালিকানা নিয়ে নেপাল ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে ১৮১৬ সালে সুগৌলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর আওতায় মহাকালী নদীকে ভারত ও নেপালের সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হতো। দীর্ঘদিন ধরে এর উৎস নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

নেপালের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর বেশ কিছু বছর কালাপানি এলাকা নেপালের অধীনে ছিল। স্থানীয় জনগণ নেপাল সরকারকে রাজস্ব দিত, তাদের কাছে এর প্রমাণও রয়েছে।

ভারতীয় বাহিনীকে সেখানে অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

২০১৯ সালে ভারত শাসিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার সময়ে যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে ভারত, সেখানে কালাপানিকে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেখানো হয়েছিল।

এর প্রতিক্রিয়ায় নেপাল তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মানচিত্রে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে তাদের নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দেখিয়েছিল।

ভারতের জন্য সামরিক কৌশলগত এলাকা
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এস বি আস্থানার মতে, ভারতের কাছে ওই অঞ্চলটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এটি চীনের সীমান্তের কাছে অবস্থিত লিপুলেখ গিরিপথ আর কৈলাস মানস সরোবরের সংযোগকারী রাস্তার সাথে যোগাযোগের পথ।

তিনি বলেন, ‘ভারত ও নেপাল উভয়েরই নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, নেপালের উদ্বেগগুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও সেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। ভারতকেও অনেক ভাবতে হবে। কারণ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারেই চীনা সেনারা অবস্থান করছে।’

ভারতীয় সেনাবাহিনীর আরেক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল অশোক মেহতা, যিনি নেপাল-ভারত সম্পর্কের ওপর নজর রাখেন, তিনি মনে করেন, উভয়পক্ষই সীমান্ত বিরোধ সমাধান করতে আলোচনা চালানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা খুবই ইতিবাচক। কিন্তু সম্ভাব্য দর কষাকষিটা সহজ হবে না। এ নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নেপাল একতরফাভাবে বিতর্কিত এলাকাগুলোকে মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু ওই জমি ভারতের দখলে রয়েছে। এখন এটি একটি নিরপেক্ষ এলাকার বদলে অনেকটা যেন কাশ্মিরের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। তাই কোথা থেকে আলোচনাটা শুরু হবে, তা বড় প্রশ্ন।’

চিকেন নেক করিডোরের ভূমিকা
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবারের মতো কাঠমন্ডু সফর করেছিলেন, তখনই বলা হয়েছিল যে কালাপানি ও লাদাখের আলছি এলাকা নিয়ে যেসব বিরোধ আছে, তা নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় সমাধান বের করা হবে।

কিন্তু ওই উদ্দেশে একটি বৈঠকও হয়নি।

নেপালের কয়েক কর্মকর্তা বলছেন, মানচিত্র নিয়ে বিরোধ অব্যাহত থাকলেও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তিগত কাজও খুবই ধীরগতিতে চলছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে প্রচন্ডা ও নরেন্দ্র মোদি দুজনেই কিছুটা আলোচনা করেন। কিন্তু ভারতের দেয়া ২৪ দফা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এর কোনো উল্লেখ ছিল না।

আবার জমি হস্তান্তর নিয়ে নেপালে যে বিতর্ক চলছে, তা নিয়েও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মতামত দেয়া হয়নি।

আস্থানা বলেন, বাংলাদেশের সাথে নেপালের সংযোগকারী সড়কটি শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি এবং এটি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ভারত কখনই এ নিয়ে আপস করবে না।

ওই করিডোরকে চিকেন নেকও বলা হয়। ওই এলাকা মাত্র ১৭ কিলোমিটার চওড়া। যা পশ্চিমবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর সাথে যুক্ত করেছে এবং নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটান- তিনটি দেশের সীমান্তেরই খুব কাছে। আবার উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে বাকি দেশের সংযোগ রক্ষা করে ওই অংশটিই।

তাই একে উত্তর-পূর্বের জীবন-রেখাও বলা হয়।

ওই এলাকার রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ভারত-চীন সীমান্তের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে।

জেনারেল আস্থানা বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই যে শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা নিয়ে ভারত আপস করবে না।

ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের সমীকরণ
আস্থানা বলেন, ‘আমরা শুধু ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা সেনাদের থামাইনি। আমরা ভুটানের ভূখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছেন, ভারত ওই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানকে কতটা গুরুত্বের সাথে দেখে।’

তিনি বলেন, ওই করিডোর নিয়ে যেকোনো ধরনের চুক্তি হলে তা হবে ভারতকে দু’ভাগে ভাগ করার মতো। কারণ উত্তর-পূর্বের সাথে ভারতের যোগাযোগের এটাই একমাত্র পথ।

কাকড়ভিট্টা-ফুলবাড়ি-বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট সম্পর্কে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৭ সালে।

এরপর বাংলাদেশ নেপালকে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

জেনারেল মেহতা বলেছেন, শিলিগুড়ি করিডোরের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কে ভারতের সবাই জানে

তিনি আরো বলছিলেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন যে তিনি সীমান্ত ইস্যুতে কোনো চাপের মুখে পড়েননি। তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তারা ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

তিনি জানান, ‘আমার মনে হয় যে পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। অন্তত মানুষ বুঝবে যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আমার মনে হয় না যে আলোচনাটা খুব সহজ হবে।’
সূত্র : বিবিসি

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

জনপ্রিয় খবর

How to Purchase Essay Online

The Powerful Features of Descriptive Essay Writing

Advantages of Playing Mobile Casino Games

Important Features of Online Slot Machines