ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) হিজাব-নিকাব পরা শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক নোটিশে বিভাগের সকল প্রেজেন্টেশন, টিউটোরিয়াল, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং ভাইভাতে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। বাংলা বিভাগের ওই নোটিশটি ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। নোটিশটির বিরুদ্ধে ঢাবির ধর্মপ্রাণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই নোটিশটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করে। চেম্বার জজ আদালতও এ স্থগিতাদেশ বহাল রাখে। পরে আপিল বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করে দু’মাসের মধ্যে রিটটি নিষ্পত্তি করার আদেশ দেয়। বর্তমানে রিট নিষ্পত্তির শুনানি চলমান রয়েছে।’
নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো ওই স্থগিতাদেশ বাতিল করাকে পুঁজি করে ঢাবির সর্বেশেষ পরীক্ষাগুলোতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে হিজাব পরিহিতা শিক্ষার্থীদের সাথে জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। বাংলা বিভাগের মেয়েদেরকে ওই নোটিশ মানতে বাধ্য করা হয়েছে। আইইআর-এর ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভাতে অনেককে পুরো সময় মুখ খোলা রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। কয়েকজন মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় হেনস্থার শিকার হয়েছে, কারো কারো ভাইভা পরীক্ষাই গ্রহণ করা হয়নি। অন্য ডিপার্টমেন্টের ব্যাপারেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে হিজাব-নিকাবের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কুরআন হাদিস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখেই কোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে। না হলে শিক্ষাঙ্গন থেকে মুসলিম নারীরা ঝরে পড়ার সর্বোচ্চ আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
হেফাজত আমির ও মহাসচিব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। না হলে নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরা শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্থা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করার মতো ঘটনাগুলো তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। হিজাব বা নিকাব পরিধান-সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।