কমিউনিটির কল্যাণের অঙ্গিকার নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থীদের

0
102
Screenshot

নিউইয়র্ক : ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক সিটির ব্যানারে ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জ্যাকসন হাইটসের গুলশান টেরেস মিলনায়তনে নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের এজেন্ডা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের পথ সুগমের সমাবেশ হয়েছে। এটি ছিল এ ধরনের দ্বিতীয় সম্মেলন। মূলধারায় জোরালো সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে এ ধরনের সমাবেশের গুরুত্ব অপরিসীম বলে সিটি মেয়র, সিটি কম্পট্রোলার, পাবলিক এডভোকেট ও কাউন্সিলম্যান প্রার্থীরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মো. শামসুল হকের উপস্থাপনায় মার্কিন রাজনীতিতে প্রবাসীদের অন্যতম পথিকৃত গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘২০ বছর আগে আমি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তাই, আমি জানি মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা কতটা জরুরী। কারণ, রাজনীতি ও প্রশাসনের পরতে পরতে অভিবাসন আর মুসলিম বিদ্বেষীরা দিন-রাত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ জন্যই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে; যাতে রাজনীতি ও প্রশাসনের সকলের বোধোদয় ঘটে যে আমরাও একটি অবস্থানে আছি। সব নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে আরো যত্নসহকারে।’
গিয়াস আহমেদ উল্লেখ করেন, ২০ বছর আগে কোথাও কোন প্রবাসী ছিলেন না। এমনকি কমিউনিটি বোর্ডেও দেখিনি।
‘আর এখন অনেক সিটির মেয়র, কাউন্সিলম্যান, স্টেট সিনেটর, স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ রয়েছে আমাদের কমিউনিটির। অন্তত: ৫০ জন কমিউনিটি বোর্ডের মেম্বার ছাড়াও জজ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিতরা আছেন। অর্থাৎ দিন বদলের সাথে সাথে মার্কিন রাজনীতিতে সম্পৃক্ততাও বেড়ে চলছে।’

সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৫ থেকে রিপাবলিকান পার্টির নমিনেশনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ শাহ শহীদুল হক সাঈদ বলেছেন, ‘আমরা অন্য কমিউনিটি ও ভাষার মানুষের জন্যে নির্বাচনী তহবিল গঠন করি। ওদেরকে ভোট দিয়ে সিনেট-কংগ্রেস-সিটি কাউন্সিলে পাঠাচিছ। এভাবে আর চলতে পারে না। এখোন নিজেদেরকেই ঐসব আসনে জিততে হবে। এ জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সংগঠিত হলেই জ্যাকসন হাইটসের মত বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার নিরাপত্তা সুসংহত করা সম্ভব হবে। তার ফলে কমিউনিটি এগিয়ে চলার পথও বিস্তৃত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক গাজা ইস্যুতে কেউ সেভাবে কথা বলেননি। আমাদের কমিউনিটির গিয়াস আহমেদ সর্বপ্রথম স্লোগান উঠিয়েছেন ‘মুসলিম ভোটার্স ম্যাটার’। তিনি সোচ্চার রয়েছেন গাজায় যুদ্ধ-বিরতি দাবিতে। অন্য যাদের জন্যে আমরা তহবিল গঠন করেছি তারা ভোট শেষে কোন উচ্চবাচ্য করেননি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে।’
‘প্রবাস-বন্ধু’ ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যদি আলোচনার টেবিলে বসতে না পারি তাহলে কেউই আমাদের সমস্যা নিয়ে সরব হবেন না। আমি ২০১৬ সাল থেকে ডিস্ট্রিক্ট লিডারশিপে আছি, আমি সব সময় চেষ্টা করি কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ রাজনীতি ও প্রশাসনের সামনে উপস্থাপনের জন্য। যারা সুপ্রিম কোর্টে জজ হিসেবে প্রার্থী হোন তাদের মনোনয়ন আমাকে দিতে হয়। এভাবেই আমরা কম্যুনিটির গুরুত্ব মার্কিন ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশনের পরিচালক মঈন চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমরা শুধু সিটি কাউন্সিলের মেম্বার অথবা স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান কিংবা সিনেটর-মেয়র হলেই বুঝি যে লিডার হয়েছি। অথচ বহুাজাতিক এ সমাজে সব ক্ষেত্রেই লিডার হবার সুযোগ রয়েছে এবং সে সবের গুরুত্বও আছে। আমি সব সময় ভালো কাজের সাথে আছি। ভবিষ্যতেও পাশে থাকবো।’
কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার শাহনেওয়াজ বলেন এই সিটির স্বল্প ও মাঝারি আয়ের কর্মচারিদের নিদারুন কষ্টের কথা। ‘বাসা ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে না। একই অবস্থা অন্য পেশার লোকজনেরও। সিটি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাকে আরো গুরুত্ব দেয়াও জরুরি।’
বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হবে এবং কেন্দ্রে যেতে হবে। তাহলেই কমিউনিটির গুরুত্ব বাড়বে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে না।’

সিটি মেয়র পদে ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে অবতীর্ণ একমাত্র মুসলিম প্রার্থী যোহরান মামদানি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এই সিটিতে বাস করছি। আমি জানি, অভিবাসীদের স্বপ্নের পরিধি কত বিস্তৃত। এই সিটির ৫ বরোর অভিবাসীদের একই স্বপ্ন। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সেই স্বপ্নগুলোর কথা স্মরণ করতেও কষ্ট হচ্ছে। কীভাবে এই সিটিতে নিরাপদে বসবাসের উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরী করা যাবে-সেটিও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩৬ থেকে ডেমক্র্যাটিক পার্টির এ্যাসেম্বলীম্যান যোহরান ইতিমধ্যেই খেটে খাওয়া অভিবাসীদের সব আন্দোলনে সরব রয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন শুরু থেকেই। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের সময় অনশন করেছেন। গ্রেফতারও হয়েছিলেন অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষার আন্দোলনের সময়। এভাবেই নিজেকে বাংলাদেশীদের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিগণিত করতেও সক্ষম হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই সিটির অধিবাসিরা প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকেন কীভাবে বাসা ভাড়া কিংবা মর্টগেজ পরিশোধ করবেন, কোত্থেকে সংগৃহিত হবে কনএডিসন অথবা পানির বিল। এমনকি সাবওয়ে/বাসের টিকিটের অর্থ নিয়েও অনেকে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কারণ, যা আয় হচ্ছে তার পুরোটাই ব্যয় হয় খাদ্য-সামগ্রি ক্রয়ে। কেন হয়েছে এমন অসহনীয় পরিস্থিতি? কে দায়ী এ জন্য? এসবের জবাব খুঁজতে হবে এব্ং সে অনুযায়ী সামনের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।’
যোহরান বলেন, ‘এই সিটিতে কারোরই নিরাপত্তা নেই। সকলেই সন্ত্রস্ত। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে সকলের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে।’
মেয়র প্রার্থী ব্র্যাড লেন্ডার নিজেকে বাংলাদেশী লিডার হিসেবে দাবি করে বলেন, ‘ব্রুকলীনের চাচ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকা থেকে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম আমি সিটির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হয়েছি সেখানকার বাংলাদেশীদের অকুন্ঠ সমর্থনে। এরপর আমি ২০২১ সাল পর্যন্ত একই আসনে বিজয়ী হয়েছি। এরপর আমার আসনটি ছেড়ে দিয়েছি বাংলাদেশী আমেরিকন শাহানা হানিফের সমর্থনে। শাহানা হয়েছেন এই সিটির প্রথম বাংলাশেী এবং প্রথম নারী কাউন্সিলম্যান। ২০২১ সালের নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়েছি সিটি কম্পট্রোলার পদে। চার বছরের দায়িত্ব শেষে লড়ছে মেয়র পদে। ডেমক্র্যাটিক পার্র্টির মেয়র হিসেবে বিজয়ী হতে পারলে এই সিটির অভিবাসী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে কাউকে টানাটানি করতে দেব না। ব্র্যাড লেন্ডার বলেন, আমি হচ্ছি নিউইয়র্ক সিটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে জুইশ কম্যুনিটির একজন। সে আলোকে সকল কম্যুনিটির স্বার্থকে আমি বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে আসছি। শুধু তাই নয় নিউইয়র্ক স্টেটে আমিই প্রথম জুইশ লিডার, যিনি গাজায় যুদ্ধ বিরতির আন্দোলনে সরব ছিলাম।’
প্রধান শামসুল হক স্বাগত বক্তব্যে তথ্য-উপাত্তের আলোকে উল্লেখ করেন যে, আমেরিকায় বাঙালিদের আগমণ শুরু হয়েছে ১৮৮৭ সালে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আগমণের হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখোন বিশেষ একটি পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশীরা।তবে সংখ্যার অনুপাতে মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে যেভাবে ঠাঁই পাওয়া উচিত ছিল তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সেই সংকট কাটিয়ে উঠার অভিপ্রায়ে ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক সিটি’ কাজ করছে। আজকের এ আয়োজনে অনেক ভাল লাগছে। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থীর সমাগম ঘটায় আশা করছি কম্যুনিটি আরো উজ্জীবিত হবে।
এতে প্রার্থীগণের মধ্যে আরো ছিলেন হায়রাম মনসেরাত, জেনিফার রাজকুমার, ইসমাইল মালাভি, মাইকেল ব্ল্যাক, জাস্টিন ব্র্যানন, মার্ক লেভিন, জুমানি উইলিয়ামস, স্টেট সিনেটর জন ল্যু প্রমুখ।
কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, প্রচার সম্পাদক অনিক রাজ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার মিতা, হোমকেয়ার ব্যবসায়ী আকাশ রহমান, খোরশেদ খন্দকার, অজিৎ ভৌমিক, এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা জামিল সরোয়ার জনি, ডিটেকটিভ মাসুদ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here