উত্তরপ্রদেশে ৬ বছরে ১০০০০ ‘এনকাউন্টার’, নিহতের সংখ্যা কত?

0
146

গত ৬ বছরে ১০ হাজার ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশে। ওই ঘটনায় ৬৩ জন দুষ্কৃতিকারীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের দেয়া সরকারি তথ্যে।

উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের লক্ষ্য ছিল তার সরকার অপরাধমূলক কাজ এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিষয়ে কোনোরকম আপস করবে না। রাজ্যকে অপরাধমুক্ত করতে তাই ঢালাও ক্ষমতা দিয়ে দেয়া হয় পুলিশ-প্রশাসনকে।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যোগীর সরকার মাফিয়া, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেয়। রাজ্যকে অপরাধমুক্ত করতে দুষ্কৃতিকারীদের কড়া হাতে দমনের পথে হাঁটেন যোগী। তার পর থেকে একের পর এক ‘এনকাউন্টার’-এর ঘটনা ঘটতে থাকছে ওই রাজ্যে। সেই ‘এনকাউন্টারে’ কোনো দুষ্কৃতিকারীর মৃত্যু হয়েছে, কেউ আহত অবস্থায় ধরা পড়েছেন।

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকার অপরাধ সম্পর্কিত একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই তথ্য উদ্ধৃত করে এনডি টিভি জানিয়েছে, গত ৬ বছরে ১০ হাজার ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে। সেই ঘটনায় ৬৩ জন দুষ্কৃতিকারীর মৃত্যু হয়েছে। এমনই দাবি করা হয়েছে ওই সরকারি তথ্যে।

যদিও সম্প্রতি লখনউ-এর এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার একটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন, ‘পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৭৮ জন অভিযুক্ত মারা গেছেন। এই এনকাউন্টারে আমাদের যে বাহাদুর সঙ্গীরা নিহত হয়েছেন, তাদের সংখ্যা ১৫। ১ হাজার ৪২৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। এই সব এনকাউন্টার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনেই করা হয়েছে।’

প্রয়াগরাজে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ড নিয়ে গোটা উত্তরপ্রদেশে সরগরম। শুধু তাই-ই নয়, এই ঘটনায় পুলিশের ‘এনকাউন্টার’ দুই দুষ্কৃতিকারীর মৃত্যু পরিস্থিতিতে আরো সরগরম করেছে। দুষ্কৃতিকারীরা যে গাড়িতে এসে উমেশের উপর আক্রমণ করে, তার চালক আরবাজকে প্রয়াগরাজে ‘এনকাউন্টার’-এ মেরে ফেলা হয়। তার পর পরই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় আর এক দুষ্কৃতিকারী বিজয় কুমার ওরফে ওসমান চৌধুরীর। শুধু উমেশ হত্যাকাণ্ডই নয়, দুষ্কৃতিকারী দমনে উত্তরপ্রদেশে মাঝেমধ্যেই এমন ‘এনকাউন্টার’-এর খবর পাওয়া যায়। যদিও বিরোধীরা যোগী সরকারের পুলিশের এই ‘এনকাউন্টার’ নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে, আপত্তিও জানিয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতিকারী দমনে যোগীর ‘এনকাউন্টাররাজ’ কায়েম রয়েছে গোটা উত্তরপ্রদেশে।

উত্তরপ্রদেশের পুলিশের একটি হিসাব বলছে, ৬ বছরে ১০ হাজর ৫০০ ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে! শুধুমাত্র ২০২২-এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই ১ হাজার ৬৬টি ‘এনকাউন্টার’ ঘটেছে। আর ২০১৭-র মার্চ থেকে ২০২২-এর এপ্রিল, এই সময়ের মধ্যে ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৪টি। আর এই ৬ বছরের মধ্যে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১৭৮ জন দুষ্কৃতিকারীর। সংঘর্ষে মারা গেছেন ১৫ পুলিশকর্মীও। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমনই দাবি করা হয়েছে ‘দৈনিক ভাস্কর’-এর এক প্রতিবেদনে।

যোগী আদিত্যনাথের ‘ঠোক দো’ শব্দবন্ধ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বহু আগে। অখিলেশ যাদবও যে সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘যোগী কথায় কথায় বলেন, গুলি চালিয়ে দাও। পুলিশও তার ‘ঠোক দো’ নীতি মেনে চলছে। তার জন্যই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’ প্রশ্ন উঠেছিল, এই সব ‘এনকাউন্টার’ ‘এক তরফা হত্যা’ নয় তো?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিরাগ গুপ্ত ‘এনকাউন্টার’ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতের আইনব্যবস্থায় ‘এনকাউন্টারকে’ আইনগত বৈধতা দেয়া হয়নি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী, জীবনের অধিকার হলো মৌলিক অধিকার। আইনে বলা হয়েছে, সরকার কোনো ব্যক্তির জীবনযাপনের অধিকার একমাত্র আইনিপথেই হরণ করতে পারে। ‘এনকাউন্টার’ একটি নেতিবাচক বিষয়। সংবিধানে আইনের শাসনের কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো দোষী ব্যক্তিকে আদালতের রায়ের পরই দোষী সাব্যস্ত করা যায়। আদালতেই তার মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। যতক্ষণ আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত না হন, ততক্ষণ তিনি নির্দোষ।

যদিও বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরপ্রদেশ সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার হিসাবের সাথে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দেয়া তথ্য মিলছে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কোন তথ্য বেশি নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে।
সূত্র : আনন্দবাজার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here