সংকটের আড়ালে আছে সম্ভাবনা

0
47
সংকটের আড়ালে আছে সম্ভাবনা
সংকটের আড়ালে আছে সম্ভাবনা
ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বড় ধরনের সংকটে ফেলছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন সংকটের আবির্ভাব হয়েছে। সেই সংকটের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রোববার রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউপি) মিলনায়তনে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা : অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. সেলিম জাহান। ডিস্টিংগুইশড লেকচার সিরিজের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (ডিবিএ) ও ক্লাব অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং (সিএফএ) এ আলোচনার আয়োজন করে।
এ সময় ড. সেলিম জাহান বলেন, শুল্কযুদ্ধ যেটা শুরু হয়েছে সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে কম অংশে ঘাতকের ভূমিকা পালন করবে না। যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধ শুরু করলে বিকল্প কী আছে। আমরা কী তা আঞ্চলিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারব? এই চিন্তাগুলো করা এখনই দরকার।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কেবল নেতিবাচক হিসেবে দেখলে আমাদের ভুল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে সুযোগ কতখানি আছে সেটাও দেখতে হবে। নিজের মতো করে শুল্ক যুদ্ধে আলাদা অবস্থান করতে চাইলে সেটাও ভুল হবে। এখানে যূথবদ্ধভাবে বা যৌথভাবে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমেরিকায় রফতানি বাড়াব। তাদের কাছ থেকে আমদানি বাড়িয়ে ঘাটতি পূরণ করব। তাতে যুক্তরাষ্ট্র খুশি হবে, আমাদের ওপর শুল্ক কমাবে; এটা হবে না। আরও আমদানি করে বাণিজ্য ঘাটতি মেটাব। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করব, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এগুলো চলবে না। কারণ সে খুব যুক্তির মানুষ নয়। এসব যুক্তি চলে যৌক্তিক মানুষের সঙ্গে।
সেলিম জাহান বলেন, আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। অন্যান্য রাষ্ট্র যারা আছে তাদের পণ্যের ওপরে আমাদের যে শুল্ক আরোপ আছে তা যদি কমিয়ে আনতে পারি, সেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন রকমের বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারব। আঞ্চলিকভাবে বা আঞ্চলিক বলয়ে যেসব দেশ আছে তাদের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। এ বাজারে প্রবেশ করতে পারলে ভালো হবে বলে মত দেন এ অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের দাম বাড়বে, চাহিদা কমে যাবে। সেখানে নতুন সুযোগ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের বৈচিত্র্য করতে হবে।
আলোচনায় সেলিম জাহান বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে কিছু সুযোগ আমরা হারাব। বিনাশুল্কে বা কম শুল্কে পণ্য পাঠাতে পারব না। বৈশ্বিক ঋণের জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে। পণ্য রফতানিতে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হব। এগুলোর জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি কী প্রস্তুত? এ নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে কী না।
অন্যদিকে আলোচনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সমাজজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কথা ও আলোচনার পরিবর্তে সব সংকট সব সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছি সহিংসতা বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতা আমাদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতা যখন একটা সমাজে ভাষা হয়, সেখানে মানব উন্নয়ন হয় না।
দেশে ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি হলেও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। বৈষম্যের কারণে একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে নিজস্ব কোষাগারের মতো ব্যবহার করেছে বলেও অভিমত এই অর্থনীতিবিদের। বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদরা প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে অনেক মাতামাতি করছেন। প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ না ৫.৯ শতাংশ। এই ফারাকে কিছু যায়-আসে না। অর্থনীতির অবস্থা যেটা আছে তা মানুষের জীবনে কতখানি উপকার দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমেছিল, তা আবারও বেড়েছে।
ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসের সাবেক এই পরিচালক বলেন, অর্থনীতিতে বড় স্লথগতি এসেছে। বলা হচ্ছে আমাদের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। অর্থনীতি স্লথ থাকলে আমাদের যা অর্জন তা নষ্ট হবে। আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি ও আমরা একে অন্যের সঙ্গে যে ব্যবহার করছি- তা সমাজে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আজকের বাংলাদেশের সমাজজীবনে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ- এই ব্যাপারগুলো বিস্মৃত প্রায়।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের তাৎক্ষণিক কিছু সংস্কার দরকার। কিছু স্বল্পমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন আছে। অবস্থাভেদে আপনাকে নির্ভর করতে হবে কোন সংস্কার তাৎক্ষণিক করতে হবে। মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে গেছে তখন তাৎক্ষণিক সংস্কার করতে হবে, যাতে মানুষ স্বস্তি পায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন স্থপতি মাহবুবা হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। তারা তাদের বক্তব্যে জাতীয় উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে একাডেমিক সংলাপের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ড. এম. এ বাকি খালিলি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান সারওয়ার আর. চৌধুরী, বিভিন্ন অনুষদের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here