বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দীর্ঘমেয়াদি ঊর্ধ্বগতি এখনো অটুট রয়েছে। যদিও সম্প্রতি ইতিহাসের অন্যতম বড় সাপ্তাহিক পতন ঘটেছে। মালয়েশিয়ার ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংক (ইউওবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, নিরাপদ বিনিয়োগ ও বহুমুখীকরণের চাহিদা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে (এক আউন্স ২ দশমিক ৪৩০৫ ভরি)।
ইউওবি জানায়, সাম্প্রতিক বিক্রয়চাপ কোনো বিপদ নয় বরং এটি ‘সঠিক ও প্রয়োজনীয় সংশোধন’, যা অতিরিক্ত জল্পনামূলক বিনিয়োগ ঠাণ্ডা করবে এবং পরবর্তী স্থিতিশীল ঊর্ধ্বগতির পথ তৈরি করবে।
গত ২০ অক্টোবর স্বর্ণের দাম প্রায় আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৪০০ ডলার থেকে এক সপ্তাহে নেমে আসে ৩ হাজার ৯০০ ডলারের নিচে, যা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতন। এর আগে আগস্টে দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলারের বাধা ভেঙে তিন মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছিল।
ইউওবি জানায়, এই পতন ‘খুবই প্রয়োজনীয়’ ছিল, কারণ বছরের মাঝামাঝি থেকে অতিরিক্ত ‘লং পজিশন’ তৈরি হয়েছিল, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল।
ব্যাংকের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান স্বর্ণসংগ্রহ এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ মাধ্যমে (বুলিয়ন, ফিউচার ও ইটিএফ) টাকার প্রবাহের কারণে স্বর্ণের মৌলিক চাহিদা এখনো শক্তিশালী।
বর্তমানে স্বর্ণের ইটিএফ হোল্ডিং প্রায় ১০ কোটি আউন্স, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনের সাংহাই ফিউচার এক্সচেঞ্জে গত জুলাইয়ে মজুদ ছিল ২০ টন, যা এখন বেড়ে ৯০ টন হয়েছে।
ব্যাংকটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘ডি-ডলারাইজেশন’ ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের চাহিদা আরও বাড়ছে।
ব্যাংক মুয়ামালাত মালয়েশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহদ আফজানিজাম আবদুল রশিদ বলেছেন, ‘এই পতন বাজারের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিরতি। এটি পরবর্তী স্থিতিশীল উত্থানের সুযোগ তৈরি করছে।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান ক্রেডিট রেটিং ও ডলারের ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিকল্প নিরাপদ সম্পদ খুঁজছেন- আর সেই ক্ষেত্রে স্বর্ণই সেরা বিকল্প।
তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণসংগ্রহ প্রতিবছর গড়ে ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্বর্ণচাহিদা ১ হাজার ৩১৩ টনে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ সময়ে ২২০ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
ইউওবি সতর্ক করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে স্বল্পমেয়াদে অস্থিরতা থাকতে পারে।




