কাশ্মীর হামলা ঘিরে উত্তপ্ত ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্ক

0
21
কাশ্মীর হামলা ঘিরে উত্তপ্ত ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীর হামলা ঘিরে উত্তপ্ত ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্ক

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। ২০১৯ সালের পর এটি কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা, যা অঞ্চলজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।

হামলার পরপরই ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘কঠোর প্রতিশোধ’-এর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ হামলার পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসি’কে বলেন, ‘আমরা হয়তো আরেকটি ভয়াবহ সংঘাতের মুখোমুখি হতে চলেছি।’ তিনি ২০১৬ সালের উরি হামলা ও ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যখন সীমান্ত পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এবং বালাকোটে বিমান হামলার মতো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। ইসলামাবাদ ভারতের পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং ভারতের জন্য নিজেদের আকাশসীমা ও বাণিজ্যপথ বন্ধ করে দিয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ করে হামলার কারণে রাজনৈতিক চাপ ও প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ‘যদি ভারত পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেয়, তাহলে পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে,’ বলেন কুগেলম্যান।

হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফোন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরান এলাকায় বন্দুকধারীরা অতর্কিতভাবে পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়, যেখানে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুও ছিলেন। এই হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কিছুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিশ্বব্যাপী এই হামলার নিন্দা জানানো হচ্ছে এবং কাশ্মীর অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলেছে জাতিসংঘ। মূলত হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে, যেটি গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার পর্যটকের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। বন্দুকধারীদের গুলিতে সেখানে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা এবং একজন নেপালের নাগরিক। আহত হন আরও অন্তত ১৭ জন।

এই ঘটনায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। তবে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে কাশ্মীরের এই হামলাকে সাজানো ঘটনা বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, এটি ছিল একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’, অর্থাৎ নিজেরাই ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।

হামলার এই ঘটনার পর উভয় দেশই উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে এবং এতে করে উভয় দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here