চীনের ঐতিহ্যবাহী চা অঞ্চল এখন কফির স্বাদে মাতোয়ারা

0
20
চীনের ঐতিহ্যবাহী চা অঞ্চল এখন কফির স্বাদে মাতোয়ারা
চীনের ঐতিহ্যবাহী চা অঞ্চল এখন কফির স্বাদে মাতোয়ারা

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের পাহাড়ঘেরা এক ক্যাফেতে লিয়াও শিহাও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কফি বিন দিয়ে তৈরি করছেন গরম কফি। এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পানীয়ের মধ্যে এটি এখন এক আধুনিক সংযোজন। চীনের পু’এর থেকে এএফপি জানায়, শত শত বছর ধরে ইউনান প্রদেশের পু’এর অঞ্চল তার সমৃদ্ধ ফারমেন্টেড চায়ের জন্য বিখ্যাত, যাকে কখনও কখনও ‘পু-এহ’ চা হিসেবেও ডাকা হয়। এই চা পূর্ব এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত।

কিন্তু এখন যখন তরুণ চীনারা তীব্র এসপ্রেসো, ফেনাযুক্ত লাটে ও ফ্ল্যাট হোয়াইটের স্বাদে আকৃষ্ট হচ্ছে, তখন অনেক চাষি ঐতিহ্যবাহী চায়ের পাশাপাশি কফি উৎপাদনের দিকেও ঝুঁকছেন। ‘মানুষ এখন আমাদের হাতে তৈরি ড্রিপ কফি চেখে দেখতে আসছেন এবং এর স্বাদের পূর্ণ অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন,’ এএফপিকে বলেন ২৫ বছর বয়সী লিয়াও। ‘আগে তারা বেশিরভাগই বাণিজ্যিক কফির দিকেই ঝুঁকতেন, হাতে তৈরি শিল্পকর্মের মতো কফিতে আগ্রহ দেখাতেন না,’ যোগ করেন তিনি। লিয়াওর পরিবার তিন প্রজš§ ধরে ‘শিয়াওওয়াজি’ নামে পরিচিত কফি খামার পরিচালনা করছে। ছায়াঘেরা একটি উপত্যকায় অবস্থিত এই খামারে খাড়া পাহাড়ের ঢালে সারি সারি চিকন কফি গাছের সমাহার। গাছের চেরির মতো ফল কাঠের পাটাতনে শুকানো হয়। এ মাসে এএফপি যখন খামারটি পরিদর্শন করে, তখন দেখা যায়, বেশ কয়েকজন পর্যটক সবুজ ঢালের দিকে মুখ করে ক্যাফেতে বসে বিশেষ ধাঁচের কফি উপভোগ করছেন।

‘খুবই ভালো,’ বললেন ২১ বছর বয়সী কাই শুউয়েন, যিনি বার স্টুলে বসে একের পর এক নমুনা কফিতে চুমুক দিচ্ছিলেন। ‘যদিও কিছু বিন আমার ধারণার চেয়ে একটু টক লাগছে, আবার কিছু তো আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।’ সরকারি তথ্যমতে, প্রতি বছর পু’এর অঞ্চলের খামারগুলো চীনের বড় বড় শহরে হাজার হাজার টন কফি বিক্রি করে। বেইজিং ও সাংহাইয়ের মতো মহানগরগুলোয় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমৃদ্ধ ক্যাফে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়।

কফি রোস্টিং ও বারিস্তা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লিয়াও মনে করেন, তার নিজের অঞ্চলের কফি ‘ক্রিমের মতো স্বাদযুক্ত এবং পেলব, আঁঠালো মুখভরা অনুভূতি’ দেয়। পু’এরে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু হয় মূলত আশির দশকে। এখনও অঞ্চলটি তার শতাব্দীপ্রাচীন চা বাণিজ্যের জন্য বেশি পরিচিত।

লিয়াওর দাদা, ৮৩ বছর বয়সী লিয়াও শিউগুই বলেন, ‘কয়েক দশক আগে যখন আমি পু’এরে আসি, তখন এখানে কফি সম্পর্কে কেউ কিছু জানত না।’ তিনি ছিলেন সেই সময়ের খুব কমসংখ্যক চীনাদের একজন, যিনি কফি চাষ সম্পর্কে পড়াশোনা করেছিলেন। তবে এই অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উচ্চ ভূমি ও মৃদু জলবায়ু নতুন এই ফসলের জন্য বেশ উপযোগী ছিল বলে জানান তিনি।

‘আমরা যে কফি উৎপাদন করি, তা শক্তিশালী হলেও বেশি তেতো নয়, ফুলের সুবাসযুক্ত হলেও বেশি কটু নয় এবং সামান্য ফলের স্বাদও থাকে,’ যোগ করেন তিনি। কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়া এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে মিশ্রভাবে চাষ করা হয় ‘শিয়াওওয়াজি’ খামারে। প্রতি বছর এখানে প্রায় ৫০০ টন কাঁচা কফি ফল উৎপাদিত হয়।
প্রতিদিন দুই-তিন কাপ কফি পান করেন লিয়াও শিউগুই। তিনি বলেন, এই পানীয়ই তার বার্ধক্যে তাকে সুস্থ ও তরুণ রাখছে। ‘কফি পান করলে আপনি তরুণ ও সুস্থ থাকবেন… বার্ধক্য ঠেকানো সম্ভব,’ হাসতে হাসতে বলেন তিনি। ‘আর এখন তো সবাই কাজে এত ক্লান্ত… তারা মস্তিষ্ককে চাঙা রাখতে চায়।’

গত কয়েক বছরে চীনে কফির উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ও কলম্বিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী উৎপাদনকারীদের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চীনের প্রায় সব কফি উৎপাদনই হয় ইউনান প্রদেশে, যার বেশিরভাগই কেন্দ্রীভূত পু’এরে।

গত মাসে ইউনান সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, এই প্রদেশের কফি ‘চীনকে প্রতিনিধিত্ব করে’, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে। এই খাত আরও সম্প্রসারণে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যাতে উৎপাদন উন্নত হয়, বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয় এবং রপ্তানি বাড়ে। সরকার পর্যটনের সঙ্গেও কফি উৎপাদনকে যুক্ত করেছে দেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে।

৫১ বছর বয়সী অভিজ্ঞ কৃষক ইউ দুন বলেন, তিনি তার খামার পরিদর্শন, হোমস্টে এবং তার দাই জাতিসত্তার রন্ধনশৈলীর সঙ্গে কফির সংমিশ্রণে পরিচালিত রেস্তোরাঁর মাধ্যমে নতুন আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বলেন, এখন নিজেই বিন প্রক্রিয়াজাত ও রোস্ট করতে শেখার ফলে আগের তুলনায় ‘দশগুণ’ বেশি আয় করছেন। ‘আগে বলতাম কফি শুধু ধনীদের জন্য, কিন্তু এখন সেই ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেছে,’ বলেন ইউ দুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here