সামরিক ঘাটতির মুখে ইসরাইল: পালিয়ে বাঁচছে কি অর্থোডক্স ইহুদিরা?

0
18
সামরিক ঘাটতির মুখে ইসরাইল: পালিয়ে বাঁচছে কি অর্থোডক্স ইহুদিরা?
সামরিক ঘাটতির মুখে ইসরাইল: পালিয়ে বাঁচছে কি অর্থোডক্স ইহুদিরা?

ইসরাইলে সামরিক ঘাটতির গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। সামরিক বাহিনী প্রশিক্ষণ ছাড়াই নতুন সৈন্যদের সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরাইলি রাজনীতিতে অর্থোডক্স ইহুদি সম্প্রদায়, বিশেষ করে হারেদিদের সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলার ইস্যু আবারো তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ইসরাইলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে সেবা না দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “কেউ যদি দেশের জন্য কাজ করতে না চায়, তবে তার এক শেকেলও পাবার অধিকার নেই।” ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনার সূত্রে জানা গেছে, লাপিদ আরও জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের নীতিই রিজার্ভ বাহিনীর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে এবং সামরিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হারেদি ইহুদিদের সামরিক সেবায় বাধ্য না করা নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে আসছে। ডানপন্থী দলগুলো সাধারণত হারেদিদের ছাড় দেয়, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থীরা তাদেরও বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার আওতায় আনতে চায়।

হারেদিরা ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রে (ইশিভা) জীবন অতিবাহিত করে এবং সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। তবে গাজায় চলমান দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এবং সৈন্য সংকটের মুখে এই সুবিধা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বামপন্থী দলগুলো একটি আইন পাসের চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে হারেদিদের এই ছাড় বাতিল করা হয়। যদিও এতে হারেদি সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে সরকার।

সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট স্বীকার করেছেন, বর্তমানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বেনেট বলেন, “ইসরাইলের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি কখনো আসেনি, যখন আমাদের এত বিশাল সংখ্যক সেনার প্রয়োজন ছিল।”

ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইয়েদিয়ত আহারোনত-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরাইলের সেনাবাহিনীতে অন্তত ২০,০০০ সৈন্যের অভাব রয়েছে। গাজায় যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রতা এবং রিজার্ভ বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সেনাবাহিনীকে তাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির সময়সীমা পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে বাধ্য করেছে।

হিব্রু ভাষার টিভি চ্যানেল “কান” এক অনুসন্ধানে দেখিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখন গোলানি এবং গুয়াতি ব্রিগেডের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সৈন্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই সরাসরি গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করছে। বিষয়টি সামরিক দক্ষতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

গাজায় চলমান সংঘর্ষ, সৈন্য ঘাটতি এবং অর্থোডক্স ইহুদিদের সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলা ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনী যদি হারেদিদের বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ দিতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা এবং সামাজিক সংহতি উভয়ই বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়বে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here