ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভ্যাকসিন নিতে এসেছেন বাবা ও কন্যা। কারণ হাসপাতালে আসার একটু আগেই বাসায় শখের বিড়ালকে খাবার খাওয়াতে গিয়ে দুজনকেই কামড় দিয়েছে পোষা টম (বিড়াল)। তাই ভবিষ্যতে জটিল কোনো রোগে আক্রান্তের শঙ্কা থেকে হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে দিগ্বিদিক ছুঁটছেন বাবা ও কন্যা।
সম্প্রতি জেলার সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখা মিলে এমন দৃশ্য। রক্তাক্ত আঙুল নিয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন বাবা-মেয়ে দুজনেই। সময়মতো ভ্যাকসিন না দিতে পারলে নিজেদের দেহে বাসা বাঁধতে পারে জটিল কোনো মরণঘাতী রোগ। এ সময় মেয়ের ওপর মেজাজ হারাতেও দেখা গেছে এই পিতাকে। কেননা মেয়ের শখের পোষা বিড়ালের কারণেই আজকের এই জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তাই মাঝে মধ্যে অবস্থা দেখে অগ্রাধিকার ভেদে ভ্যাকসিনের সেবা দিতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী এ বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু বিড়ালের আচড় ও কামড়ের জন্য ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৫ জনকে। যা অসাবধানতা এবং অসচেতনাতার কারণে দশ ও দেশের সম্পদের অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি এ নিজেদের পোষা প্রাণীকে রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হতো তাহলে এ পরিমাণ ভ্যাকসিন হাসপাতালে মজুত থাকত।
এদিকে এ বছরের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুকুর, শিয়ালের আক্রমণে ১ হাজার ১৯২ জনকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে বিড়ালের কামড় বা আচড়ের রোগীর সংখ্যা বেশি যার কারণে ভ্যাকসিন সে খাতেই বেশি অপচয় হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে এমনো সময় মোকাবিলা করতে হচ্ছে কোনো পথিক রাস্তায় কুকুরের আক্রমণের শিকার হলেন, অথচ ভ্যাকসিন সেবাটা বিনামূল্যে তিনি পেলেন না। কারণ বিড়ালের আক্রমণের রোগী এত বেশি যে অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের রোগীদের বাহির থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানান, যারা শখের বসে বিড়াল পালন করছেন তারা যদি একটু সচেতন হয়ে বিড়ালকেই ভ্যাকসিন দেয় তাহলে এত ঝুঁকি থাকে না। শুধু সচেতন না হওয়ার কারণে বিড়ালের ভ্যাকসিন নিজেদের নিতে হচ্ছে। এতে করে দেশ ও দশের ক্ষতি হচ্ছে। একটু সচেতন হলে হাসপাতালে ভ্যাকসিনের সংকট হয় না। আমরা সবাইকে আহ্বান করব যারা বিড়াল পালন করছেন বা কুকুর পালন করছেন তারা যেন ওই প্রাণীকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, বিড়ালের কামড়ে সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন (র্যাবিস টিকা) না নিলে সবচেয়ে মারাত্মক যে রোগটি হতে পারে তা হলো র্যাবিস বা হাইড্রোফোবিয়া। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং চিকিৎসা না নিলে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যু ঘটে।
বিড়াল, কুকুর, শিয়াল, বাদুড় ইত্যাদি প্রাণীর লালা থেকে র্যাবিস ভাইরাস সংক্রমিত হয়। কামড়, আঁচড় বা খোলা ঘায়ে বিড়ালের লালা লাগলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
চিকিৎসা হিসেবে বলা হচ্ছে রোগটি একবার শুরু হলে কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। তাই কামড়ের পরপরই ভ্যাকসিন নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ভ্যাকসিন নিতে আসা নিহা আক্তার বলেন, আমি বিড়াল খুবই পছন্দ করি। বিড়ালকে খাবার দিতে গিয়ে আঙুলে কামড়ে দিয়েছে। এখন ভ্যাকসিন নিতে এসেছি। আমার ভুল হয়েছে। বিড়ালকে আগেই ভ্যাকসিন দিলে এমন দিন দেখতে হতো না। আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমার মতো যারা বিড়াল পোষেণ তারা যেন অবশ্যয় বিড়ালকে ভ্যাকসিন দেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রকিবুল আলম বলেন, অত্র হাসপাতালে জলাতঙ্কের পোস্ট এক্সপোজার ভ্যাকসিন নিতে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিড়ালের আঁচড়ে আগত রোগীর সংখ্যা কুকুরের আঁচড়, কামড়ে আগত রোগীর সংখ্যার প্রায় তিনগুণ। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পোষা বিড়াল নাড়াচাড়া করার কারণেই এটি ঘটে। সে ক্ষেত্রে পোষা বিড়াল বা কুকুরের আগে থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে এই সংখ্যক ভ্যাকসিন রাস্তার কুকুর, বিড়াল অথবা শিয়ালের কামড়ে ব্যবহার করা সম্ভব। এতে করে এই হাসপাতালে ভ্যাকসিন সংকট ও কেটে যাবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: ইজাহার আহমেদ খান বলেন, জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে আমরা সমস্ত উপজেলা গুলোতে প্রচারণা চালাচ্ছি। সচেতন করছি এবং বিনামূল্যে প্রাণীদের ভ্যাকসিন সেবাও দিচ্ছি।




