সোনাইমুড়ী নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

0
15
সোনাইমুড়ী নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
সোনাইমুড়ী নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমা আক্তার। তার স্বামীর বাড়ির পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে। আর পিতার বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার মটুবি গ্রামে। সে অনলাইনে আবেদন করে গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় পিতার বাড়ির ঠিকানায় ভোটার হতে আসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে।

নির্বাচন কর্মকতা আবু তালেবের রুমে প্রবেশ করার পর ভোটার হতে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে ও তার বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগমকে বের করে দেয়। পুনরায় আবার তার রুমে প্রবেশ করলে ওই কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালগাল শুরু করে। পরে মা-মেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানান।

সোনাইমুড়ীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ড্রাইভার মনির হোসেন। এখন তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি চালান। তার এক আত্মীয় ভোটার হতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করে। তার জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে হয়রানি করতে থাকে। পরে সে উপজেলা কর্মচারী পরিচয় দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। পরে ওই কর্মচারী তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অফিসের পিয়ন সালাউদ্দিন জানান, তার চাচাতো ভাই মাইনুল ইসলাম ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে যান। একইভাবে জন্ম নিবন্ধনে বয়সের ত্রুটি দেখিয়ে আবেদনের ফাইল ফেরত দেন ওই নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে ওই অফিসের জনৈক্য এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চুক্তি করে ভোটার হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।

উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের পলাশ জানান, তার ফুফাতো ভাইয়ের নামের আগে মো. নাই। তিনি মো. যুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে নানা অজুহাদ দেখিয়ে ওই আবেদনটি বাতিল করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে আবু তালেব যোগদান করার পরেই হয়রানি ও ঘুষ লেনদেন বেড়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরলেও কাজ না করে দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অহেতুক হয়রানি করেন। তার রুমের প্রধান দরজা বন্ধ থাকে, জানালায় থাকে পর্দা দেখা করতেও লাগে অনুমতি। চাহিদামতো প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েও পাওয়া যায় না সমস্যার সমাধান জাতীয় পরিচয়পত্রের এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দেরি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট ও চাকরিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকইে। এই অফিসে নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুণতে হয় টাকা। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা নির্বাচন অফিস থেকে উপজেলায় যোগদান করেন নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব। এখানে যোগদান করার পরেই তিনি বিভিন্ন ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রবাসীরা তাদের ভোটার আইডিকার্ড সংশোধন করতে এলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। পরে জরুরি ভিত্তিতে করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি যোগদান করার পর ঘুষের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের এক কর্মচারী জানান, মায়ের সাথে সন্তানের বয়সের অমিল থাকলে নির্বাচন কর্মকর্তা ওই আবেদনগুলো বাতিল না করে তার ড্রয়ারে রেখে দেন। পরে আবেদনকারীরা নিরুপাই হয়ে টাকার মাধ্যমে ভোটার হয়েছেন বলে অনেকের অভিযোগ। এছাড়া ঠিকানা স্থানান্তর তদন্ত করতে সময়কাল ক্ষেপণ করেন বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। সেবাগ্রহীতারা তার কার্যালয়ে হয়রানি শিকার হয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারের কাছে কয়েকটি অভিযোগ দিয়েছেন।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব দৈনিক বাংলাকে জানান, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পরই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তিনি ওই অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেননি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আক্তার বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতারা হয়রানি হচ্ছে এটা সত্য। অভিযোগ পেয়ে কয়েকবার তাকে সতর্ক করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ভোটার হতে সেবাপ্রার্থী থেকে টাকা নিয়েছে, এমন প্রমাণ থাকলে দেন। ব্যবস্থা নেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here