বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অবাধ- সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র : পিটার হাস

0
96

ঢাকা ডেস্ক :  বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আগামীতেও শীর্ষে থাকতে চায় বলে মন্তব্য জানিয়েছেন ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তবে তিনি বলেছেন সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যাত্রাপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আসন্ন সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে পছন্দের কেউ নেই। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন দেখতে চায় যে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী এখানে (বাংলাদেশ) একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের নিজেদের সরকার তারাই নির্বাচন করুক, এটাই যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। গতকাল বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

‘বাংলাদেশ কোন পথে’ শীর্ষক নিবন্ধে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস লিছেছেন, গণতন্ত্রকে সমর্থন করা এবং ব্যক্তি অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পথ চলা আরো নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে সাহায্য করে। তিনি মনে করছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সরকার, মিডিয়া থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নাগরিক সমাজ থেকে রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। তাদের কেউ যদি নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় বা তাদের কেউ যদি অন্যকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়াও বিক্ষোভকারী, রাজনৈতিক দলগুলো, সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ প্রত্যেকের আইনের শাসনকে সম্মান করা এবং সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার মাত্র ৫১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভ‚য়সী প্রশংসা করে পিটার হাস বলেছেন, আমি অবাক হই যে মাত্র ৫১ বছরে বাংলাদেশ কতোটা এগিয়েছে! আমি এমন এক বাংলাদেশকে দেখি যারা শুধু স্বাধীনতা আর গর্বকে সম্বল করে যাত্রা শুরু করেও আজ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমি কল্পনা করতে পারি, আগামী ৫১ বছরে বাংলাদেশ আরো কতদূর এগুবে। আগামী কয়েক দশকে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক উন্নত দেশ হয়ে ওঠার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই বাংলাদেশের আছে। তবে, সামনের রাস্তায় বাংলাদেশের জন্য বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে দূত বলেছেন, এই প্রতিবন্ধকতাগুলো পার হয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পরিচর্যা, সুশাসনের উন্নতি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।

পিটার হাস বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষে অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব, যদি বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য যতটা সম্ভব আমন্ত্রণমূলক ব্যাবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে। আরো অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে যদি বাংলাদেশে নিম্নলিখিত সংস্কারগুলো ঘটে : দক্ষ কর্মিবাহিনী গড়ে তোলার আরো ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া; এমন একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা, যা ব্যবসায়-সহায়ক; দুর্নীতির কারণে গোপন খরচ (লুকানো কর!) ও অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিকতা দূর করা; সব ধরনের মেধা সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া এবং আরো অবাধে মুদ্রা রূপান্তরের অনুমতি দেওয়া।

এই ধরনের এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্কার বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন : এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্রকল্প পরিদর্শন করতে গিয়ে পিটার হাস বলেন, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগে নম্বর ওয়ান আগামিতেওবিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী রেগুলেটরি বডিগুলোকে আরো আপডেট করতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রসঙ্গে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বলেন, আধুনিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশেরউন্নয়নেভুমিকারাখবে

তুলনামূলকভাবে জ্বালানি সাশ্রয় ও কার্বন নিঃসরণ কম করবে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ কম হবে।এর আগে পিটার হাস হেলিকপ্টারে করে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে গিয়ে পৌঁছান। চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার কালুম ডেভিড কর্নফোর্থ প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা দেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগামীতেও শীর্ষে থাকতে চায় আমেরিকানরা। দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. ন‚র আলী, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক) গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা এ সফরে পিটার হাসের সঙ্গে ছিলেন।

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াট গ্যাস-ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং জিই-এর কনসোর্টিয়াম ২০১৮ সালের ২৫ জুন এ প্রকল্পের ঠিকাদার বা ইপিসি নিযুক্ত করে জিইকে। পরবর্তী পর্যায়ে নেব্রাস পাওয়ার কিউ.পি.এস.সির প্রতিষ্ঠান ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রকল্পে যুক্ত হয়। প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট দিয়েছে। প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চ মান বজায় রাখছে।

সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here